মোঃ সোলায়মান: রাজধানীর মিরপুরের ভাসানটেক এলাকায় মাহে রমজান উপলক্ষে ডিএনসিসির উদ্যোগে এবং চীন দূতাবাসের সহযোগিতায় ভাসানটেক বস্তিতে বসবাসকারী এক হাজার পরিবারের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে এ ঘোষণা দেন ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।
আতিকুল ইসলাম বলেন,পবিত্র রমজান মাস প্রায় শেষ পর্যায়ে। দুদিন পরেই ঈদ। ঈদে সুবিধাবঞ্চিত মানুষ না খেয়ে থাকবে এটা হতে পারে না। তাই চীন দূতাবাসের সহযোগিতায় ভাসানটেক বস্তির এক হাজার পরিবারের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছি। আমি সবাইকে অনুরোধ করবো আপনারা সবার মাঝে ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে দিতে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়াবেন। তাদেরকে সহযোগিতা করবেন।
চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে অত্যন্ত গভীর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিদ্যমান রয়েছে উল্লেখ করে ডিএনসিসি মেয়র বলেন,চীন দূতাবাসের সাথে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন চমৎকারভাবে কাজ করছে। ডিএনসিসির আহবানে সাড়া দিয়ে চীন দূতাবাস সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। এর আগেও তাদের সহযোগিতায় কড়াইল বস্তিতে বসবাসকারী নারীদের মধ্যে স্বয়ংক্রিয় সেলাই মেশিন বিতরণ করা হয়েছে। এ ধরনের উদ্যোগ দুই দেশের সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করবে।
মেয়র বলেন,ভাসানটেক বস্তিবাসীদের পরিকল্পিত পুনর্বাসনের বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে। ভাসানটেক বস্তির পরিকল্পিত উন্নয়ন নিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্যের সাথে একাধিকবার আলাপ করেছি। এখানে বহুতল ভবন নির্মাণ করে বস্তিবাসীদের জন্য আবাসনের পরিকল্পনা রয়েছে। এই বস্তিবাসীদের পুনর্বাসন না হওয়া পর্যন্ত বস্তি উচ্ছেদ করা হবে না। বস্তিগুলোতে প্রায়ই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে৷ মহাখালী সাততলা বস্তিতে ফায়ার হাইড্রেন্ট স্থাপন করা হয়েছে। ভাসানটেক বস্তিতেও দ্রুত সময়ের মধ্যে ফায়ার হাইড্রেন্ট স্থাপন করে দিব।
নগরবাসীর উদ্দেশ্যে মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন,বাসাবাড়ির জমে থাকা স্বচ্ছ পানিতে এডিস মশার লার্ভা জন্মায়। এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গু হলে মৃত্যু ঝুঁকি আছে। তাই ঈদে বাড়ি যাওয়ার আগে বাসা বাড়ির ছাদ, বারান্দা, বাথরুম এগুলো পরিষ্কার করে যাবেন। কোথাও পানি জমে এডিসের লার্ভা জন্মাতে পারে এমন পাত্র উল্টিয়ে রাখবেন। আমি বিশেষভাবে অনুরোধ করছি স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের আপনারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে বিশেষ নজর দিবেন। ঈদ শেষে ফিরে এসে খেয়াল রাখবেন কোথায় পানি জমে রয়েছে কিনা। আমরা সবাই নিজ নিজ জায়গা থেকে সচেতন হলে ডেঙ্গু থেকে রেহাই পাবো।
তিনি আরও বলেন,ডেঙ্গু মোকাবেলায় শহরজুড়ে যত্রতত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এডিস মশার প্রজনন স্থল এবং পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ পরিত্যক্ত পলিথিন, চিপসের প্যাকেট, আইসক্রিমের কাপ, ডাবের খোসা, অব্যবহৃত টায়ার, কমোড ও অন্যান্য পরিত্যক্ত দ্রবাদি জনগণের নিকট হতে নগদ মূল্যে সংগ্রহ করার উদ্যোগ নিয়েছি। প্রতিটি ওয়ার্ডে কাউন্সিলরের কার্যালয়ে গিয়ে যেকেউ উল্লিখিত দ্রব্যাদি জমা দিয়ে নগদ অর্থ সংগ্রহ করতে পারবে। চিপসের প্যাকেট/সমজাতীয় প্যাকেট (১০০টি) ১০০ টাকা, আইসক্রিমের কাপ, ডিসপোজেবলব গ্লাস/কাপ (১০০টি) ১০০ টাকা, অব্যবহৃত পলিথিন (প্রতি কেজি) ৫০ টাকা, ডাবের খোসা (প্রতিটি) ০২ টাকা, মাটি/প্লাস্টিক/মেলামাইন/সিরামিক ইত্যাদির পাত্র (প্রতিটি) ০৩ টাকা, পরিত্যক্ত টায়ার (প্রতিটি) ৫০টাকা, কনডেন্সড মিল্কের কৌটা (প্রতিটি) ২টাকা, পরিত্যক্ত কমোড/বেসিন ইত্যাদি (প্রতিটি) ১০০ টাকা, অন্যান্য পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের দ্রব্যাদি (প্রতি কেজি) ১০ টাকায় কিনে নিবে ডিএনসিসি।
এসময় মেয়র আতিকুল ইসলাম জানান, ঈদের পর থেকেই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে প্রতিটি ওয়ার্ডে কাউন্সিলররা জনগণকে সচেতন করতে ক্যাম্পেইন শুরু করবে। প্রতি মাসে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, রাজনীতিবিদ, ইমাম, শিক্ষক ও শিক্ষার্থী সবাইকে নিয়ে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে করণীয় সম্পর্কে মতবিনিময় সভা ও সচেতনতামূলক র্যালি আয়োজন করবে।
ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেন,বাংলাদেশ ও চীন পরস্পরের নির্ভরযোগ্য বন্ধু এবং সহযোগিতার অংশীদার। চীন দূতাবাস সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য কিছু করার ভাবনা থেকেই এই উদ্যোগ। ডিএনসিসিতে সহযোগিতায় এটি বাস্তবায়ন করতে পেরেছি। এর আগে গত নভেম্বরে ডিএনসিসির আওতাধীন বনানীর কড়াইল বস্তিতে বসবাসকারী ১৪২৫ জন নারীকে স্বয়ংক্রিয় সেলাই মেশিন বিতরণ করেছি। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমানের উন্নয়নে সেলাই মেশিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সেলাই মেশিন ব্যবহার করে একজন নারী পরিবারের সদস্যদের জন্য কাপড় সেলাই করার পাশাপাশি আর্থিকভাবেও লাভবান হতে পারবে। ডিএনসিসি মেয়র সাধারণ মানুষের জন্য সবসময় কাজ করে। চীনা দূতাবাস সবসময় মেয়রের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। বিশ্বাস করি সাধারণ মানুষের জীবন-মান উন্নয়নের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে উঠবে।
খাদ্য সামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে অন্যান্যের সঙ্গে আরও উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. জহির আহমেদ, সংরক্ষিত আসনের নারী কাউন্সিলর সাহিদা আক্তার শীলা, ডিএনসিসির আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জিয়াউর রহমান এবং প্রধান সমাজ কল্যান ও বস্তি উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. মামুন-উল-হাসান প্রমুখ।
উল্লেখ্য, এক হাজার জনের প্রত্যককে ৮ কেজি মিনিকেট চাল, ১ কেজি মসুর ডাল, ২ লিটার সয়াবিন তেল, ১ কেজি লবণ, ১ কেজি পেয়াজ, ৩ কেজি আলু, ১ কেজি চিনি, হলুদ ও মরিচের গুড়ার ১০০ গ্রাম প্যাকেট এবং ১ প্যাকেট সেমাই দেওয়া হয়।