শেষবার্তা ডেস্ক : রাজধানীর এফডিসিতে শুক্রবার (৩১ মে) ফিলিস্তিনে ইসরাইলি আগ্রাসন নিরসনে করণীয় নিয়ে আয়োজিত ছায়া সংসদে সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ.কে আব্দুল মোমেন বলেন,জাতিসংঘের নিজস্ব শক্তি বলতে কিছু নেই। পাঁচটি মোড়ল রাষ্ট্রের ওপর তারা নির্ভরশীল।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আয়োজক সংগঠন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
ড. এ.কে আব্দুল মোমেন বলেন, মুসলিম বিশ্বের অধিকাংশ রাষ্ট্রনায়ক জনতার রায়ে নির্বাচিত নয়। তবে বাংলাদেশের সরকার জনগনের দ্বারা নির্বাচিত। তাই আরব বিশ্ব ফিলিস্তিন ইস্যুতে জোরালো ভূমিকা রাখতে পারছে না। ব্রাজিলের মতো নন মুসলিম দেশ ইসরাইলের রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহার করলেও কোন মুসলিম রাষ্ট্র এ পর্যন্ত এমন সিদ্ধান্ত নেয়নি। ওআইসি ও আরব লীগ একাধিকবার বৈঠকে বসলেও তারা ইসরাইলি পণ্য বয়কটে এক হতে পারে নি। ইসরাইলের সাথে আমাদের কোন বাণিজ্যিক সম্পর্ক না থাকলেও তাদের, ও তাদের মিত্রদের অনেক পণ্য আমাদের দেশে বিক্রি হচ্ছে। সম্প্রতি আমাদের ই—পাসপোর্ট থেকে একসেপ্ট ইসরাইল (Except Israel) শব্দটি ডিলিট করা দুঃখজনক। আমি পররাষ্ট্র মন্ত্রী থাকাকালিন সময়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা অন্য কেউ আমার সাথে এ বিষয়ে কোন আলোচনা না করেই এ পরিবর্তন করেছে। পাসপোর্টকে আরো মানসম্পন্ন করা এবং খরচ কমানোর জন্য জার্মানি একটি প্রতিষ্ঠান এই কাজটি করেছে বলে আমাকে অভিহিত করা হয়।
তিনি আরও বলেন, জাতিসংঘের নিজস্ব শক্তি বলতে কিছু নেই। পাঁচটি মোড়ল রাষ্ট্রের ওপর তারা নির্ভরশীল। ১৫ হাজার শিশুসহ ৩৬ হাজার মানুষকে হত্যার পরও মানবতার ফেরিওয়ালারা ফিলিস্তিনে আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কোন ভূমিকা রাখেনি। পশ্চিমাদের বাদ দিয়ে আরব বিশ্ব এক হলেও ফিলিস্তিন সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। ফিলিস্তিন ও ইসরাইল দুটি পৃথক রাষ্ট্র গঠনের মাধ্যমেই বর্তমান সমস্যার সমাধান সম্ভব।
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে সমর্থন করা নিয়ে কোন বিভক্তি নেই। সবাই ফিলিস্তিনের পক্ষে। ফিলিস্তিনিদের লড়াই একক কোন লড়াই নয়। এ লড়াই সারা পৃথিবীর মানুষের লড়াই। এই লড়াই বাংলাদেশী নাগরিক হিসেবে আমাদেরও লড়াই। ফিলিস্তিনের মানুষের যে নিরব কান্না তা সারা বিশ্বের বিপন্ন আর্তমানবতার চিৎকার। গাজায় যে হত্যা, লুণ্ঠন, ধর্ষণ, নৃশংসতা ও অমানবিকতা ঘটেছে, তা বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় কালো অধ্যায়। ফিলিস্তিনের প্রত্যেকটি মানুষ এখন জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। খাদ্য নেই, পানি নেই, বিদ্যুৎ নেই, চিকিৎসা নেই। হাসপাতালে লাশের সারি। চারিদিকে মৃত মানুষের পচা লাশের গন্ধ। বেঁচে থাকা মানুষগুলো যেভাবে বেঁচে আছে তা বেঁচে থেকেও মরে যাওয়ার মতো। অনেক জায়গায় দেখা গেছে পরিবারের সবাই মারা গেলেও লাশ সনাক্তের জন্য হয়তো দুই একজন বেঁচে আছে। সন্তানের ছিন্ন বিচ্ছিন্ন লাশ সনাক্ত করতে পারছে না বাবা—মা। মাথার খুলি ভাঙ্গা, ছিন্ন বিচ্ছিন্ন অনেক শিশুর লাশ হাসপাতালে আনা হচ্ছে। তাই অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের শরীরের বিভিন্ন অংশে নাম লিখে রাখছেন। যাতে হামলায় মারা গেলেও নিজ সন্তানের মৃতদেহটি খঁুজে পাওয়া যায়। এই বর্বরতার অবসান হওয়া উচিৎ।
“মুসলিম বিশ্বের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টাই পারে ফিলিস্তিনে ইসরাইলী আগ্রাসন বন্ধ করতে” শীর্ষক ছায়া সংসদে কবি নজরুল সরকারি কলেজের বিতার্কিকদের পরাজিত করে স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের বিতার্কিকরা বিজয়ী হয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, সাংবাদিক ঝুমুর বারী, সাংবাদিক এ কে এম মঈনুদ্দিন, সাংবাদিক একরামুল হক সায়েম, সাংবাদিক মাসুদ করিম। প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ী দলকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।