Saturday , July 27 2024
Breaking News

বাংলাদেশ ব্যাংক তার স্বাধীন সত্তা হারিয়ে ফেলেছে: ড. ফাহমিদা

মো: সোলায়মান: রাজধানীর এফডিসিতে ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় সিপিডি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক তার স্বাধীন সত্তা হারিয়ে ফেলেছে। মেরুদন্ড সোজা রেখে সিদ্ধন্ত গ্রহণ করতে পারছে না। বাইরে থেকে আরোপিত সিদ্ধান্ত কার্যকর করার প্রতি বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।

শনিবার (১৮ মে) ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।

সিপিডি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, বর্তমানে ব্যাংকিং খাতে নৈরাজ্য এমন পার্যায়ে উপনীত হয়েছে যে, আইএমএফের পরামর্শক্রমে ব্যাংক একীভূতকরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হচ্ছে। তবে যথেষ্ট পূর্ব প্রস্তুতি না থাকায় একীভূতকরণ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। জোর করে ব্যাংক একীভূতকরণ টেকসই হতে পারে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ বিভিন্ন নিয়োন্ত্রণকারী সংস্থাগুলোতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সংস্কৃতি হারিয়ে যাচ্ছে। ফলে প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে পারছে না।

সুশাসনের অভাবে সামগ্রিক অর্থনীতিকে সাপোর্ট দেয়ার সক্ষমতা ব্যাংকিং সেক্টর হারিয়েছে। জনগণ ব্যাংকিং খাতের ওপর আস্থা হারিয়েছে। ব্যাংকে গচ্ছিত আমানত নিরাপদ রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোন নিশ্চয়তা প্রদান করতে পারছে না। ফলে আমানতকারীদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। যাদের কারণে ব্যাংকিং খাতে রক্তক্ষরণ হচ্ছে, তারা ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকছে। ব্যাংকের খেলাপি ঋণের সঠিক তথ্য জনগণ জানতে পারছে না।

ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, ঋণ জালিয়াতি, ঋণ খেলাপি, অর্থ পাচার বাংলাদেশের আর্থিক খাতের সবচেয়ে বড় কালো দাগ। ব্যাংকের টাকা মেরে দিয়ে ব্যক্তি বিশেষের আরাম আয়েশ, ভোগ—বিলাস দেশের অর্থনীতিতে ক্যান্সারের আকার ধারণ করেছে। আর্থিক খাতের এই ক্যান্সারের চিকিৎসা না করে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল বা ভালো ব্যাংকের সাথে একীভূতকরণ কার্যক্রম শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর সুফল পাওয়া যাবে কি না তা বুঝতে আমাদের আরো কিছু দিন অপেক্ষা করতে হবে।

তবে দেশের আর্থিক খাতের অস্থিরতার দায় বাংলাদেশ ব্যাংক এড়াতে পারে না। নানা আইনি সুবিধা দিয়ে ব্যাংকগুলোকে পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে। সুশাসন ও জবাবদিহিতার ঘাটতি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে খাদের কিনারায় নিয়ে গিয়েছে। তাই ব্যাংক একীভূতকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চলমান সংকট উত্তরোণের যে প্রচেষ্টা নেয়া হচ্ছে তার জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকা খুবই জরুরী। ঋণ জালিয়াতকারী ও অর্থ পাচারকারীদের সামাজিকভাবে বর্জন করতে হবে। রাষ্ট্রিয়ভাবে তাদের নাগরিক সুবিধা সীমিত করা উচিৎ। আমরা দেখি ঋণ খেলাপি ও অর্থ পাচারকারীরা এয়ারপোর্টে ভিআইপি হিসেবে যাতায়াত করছে। ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহারকারীদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা কোন ভাবে চিহ্নিত আর্থিক দুষ্কৃতিকারী।
ব্যাংক খাত আজ তছনছ হয়ে গেছে গেছে। বেসিক ব্যাংক লুট হয়েছে, পদ্মা ব্যাংক লুট হয়েছে, ইউনিয়ন ব্যাংকে ভল্ট কেলেঙ্কারির কথা সবার জানা আছে। আর ন্যাশনাল তো জন্ম থেকেই জ্বলছে। ফলে দেখা যাচ্ছে রাজনৈতিক বিবেচনায় যে কয়টি ব্যাংক দেওয়া হয়েছিল তার সবকয়টিই খুবই দুর্বল অবস্থানে রয়েছে। এসব ব্যাংকের মালিকদের শুরু থেকেই উদ্দেশ্য ছিল লুটপাট করা। এখন পদ্মার সাথে এক্সিম ব্যাংক একীভূত হচ্ছে। এতে এক্সিম পদ্মায় ডুবে যায় কি না তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। আবার এক্সিম ব্যাংকেরই বা কি অবস্থা তা নিয়েও রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

“ব্যাংক একীভূতকরণ অর্থনীতিতে সুফল বয়ে আনবে” শীর্ষক ছায়া সংসদে বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের বিতার্কিকদের পরাজিত করে তেজগাঁও কলেজের বিতার্কিকরা বিজয়ী হয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, ড. এস এম মোর্শেদ, আর্থিক খাত বিশেষজ্ঞ মাহাবুব এইচ মজুমদার, সাংবাদিক দৌলত আক্তার মালা, সাংবাদিক মো. আলমগীর হোসেন। প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ী দলকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।

এছাড়াও

“অভিভাবকহীন সন্তানদের থেকে রাষ্ট্রও যেন মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে”

সাঈদুর রহমান রিমন: বৈষম্যের মাধ্যমে সৃষ্ট বঞ্চনা, নিপীড়নের ‘কোটা বিরোধী’ যৌক্তিক ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে নেমেছে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *