Saturday , July 27 2024
Breaking News

ফার্মগেট শহীদ আনোয়ারা উদ্যান ফেরতের দাবি

শেষবার্তা ডেস্ক : ৩০ দিনের মধ্যে শহীদ আনোয়ারা উদ্যান ফেরতের দাবি জানিয়েছেন, ‘ফার্মগেট শহীদ আনোয়ারা উদ্যান রক্ষা আন্দোলন’ এর পক্ষ থেকে আন্দোলনের সমন্বয়ক আমিরুল রাজিব।

তিনি বলেন, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন, গণপূর্ত অধিদপ্তর ও ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) কর্তৃপক্ষকে ৩০ (ত্রিশ) দিনের মধ্যে এখান থেকে মেট্রো রেলের স্থাপনা সরঞ্জাম সরিয়ে নিবেন। নইলে আমরা এখানে অবস্থান কর্মসূচি, ঘেরাও দিব ও আইনি ব্যবস্থা নেব।

শনিবার (১৮ মে) বিকেলে রাজধানীর ফার্মগেট শহীদ আনোয়ারা উদ্যান রক্ষার দাবিতে অনুষ্ঠিত সংহতি সমাবেশে আল্টিমেটাম ঘোষণা করেন তিনি।

ফার্মগেট শহীদ আনোয়ারা উদ্যান রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক আমিরুল রাজিব বলেন, এই আন্দোলন শুধু শহীদ আনোয়ারা উদ্যান রক্ষার আন্দোলন নয়, আমরা আন্দোলন করছি পান্থকুঞ্জ পার্ক, সাহাবউদ্দিন পার্ক, তেঁতুলতলা মাঠ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বাঁচানোর জন্য। তিনি বলেন, আগামী ৩০ দিনের মধ্যে আনোয়ারা উদ্যান খালি না করলে ঘেরাও কর্মসূচিসহ আরও কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

আলোচকেরা বলেন, দেশজুড়ে উন্নয়নের নামে প্রতিদিন মাঠ, পার্ক, উদ্যান দখল করা হচ্ছে। বনভূমি, নদী, পাহাড়, জলাশয়, সবুজবলয় নিরাপদে নেই। এমনকি উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানের স্মৃতিবিজড়িত ফার্মগেটের ঐতিহাসিক শহীদ আনোয়ারা উদ্যানেও উন্নয়নের নির্দয় আঘাত লেগেছে। এভাবে আমরা ক্রমাগত পরিবেশ ও ইতিহাসবিমুখ হয়ে ওঠছি। এইরকম পরিস্থিতি সুস্থ সংবেদনশীল নতুন প্রজন্মের জন্য হুমকি। সাময়িক ব্যবহারের কথা বলে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ শহীদ আনোয়ারা উদ্যানের গাছ কেটে পুরো উদ্যান দখল নিয়েছে। কাজ শেষ হওয়ার পরও এই উদ্যান নগরবাসী ফেরত পায়নি।

কলাবাগানের তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষা আন্দোলনের প্রধান সংগঠক সৈয়দা রত্না বলেন, ঢাকা শহরের বাচ্চারা আর খেলবে না। কারণ তাদের খেলার জায়গা নেই। পাখিরাও খেলবে না, প্রজাপ্রতিরাও আর আসবে না। আমরা শুধু মার্কেট করবো, রেস্তোরাঁ করবো। শপিং করবো আর খাবো। আমাদের জীবনে কোন সবুজ নেই, অক্সিজেনের দরকার নেই। ফুল পাতা পাখি নেই। উদ্যানের দরকার নেই। আমাদের সব উদ্যান ভেঙে কংক্রিট হয়ে যাক, আমরা কংক্রিটের ভূত হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরবো।

নারী আন্দোলনের নেত্রী শিরিন হক বলেন, একটার পর একটা যদি উদ্যান হারিয়ে যায়। আর গাছ কাটা যদি বন্ধ না হয়, তাহলে ঢাকা শহরে মানুষ বসবাস করতে পারবে না। আমাদের তো আর শপিং প্লাজার দরকার নেই। ঢাকার শহরের কি আর বাজারের দরকার আছে? নাকি একটু নিশ্বাস ফেলার জায়গার দরকার আছে। যেখানে মানুষ নিশ্বাস নিতে পারবে, বাচ্চারা খেলাধুলা করতে পারবে। তিনি বলেন, আনোয়ারা উদ্যানে মেট্রোপ্লাজা করলে, আমরা তা মেনে নিবো না।

নগর-পরিকল্পনাবিদ আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, আনোয়ারা উদ্যান পার্ক ছিল, বলা হচ্ছে মেট্রোরেলের অবকাঠামোর জন্য উদ্যান ছেড়ে দিতে হবে। অবকাঠামো এবং পার্কের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি করা এটা রাষ্ট্রের দিক থেকে একটা অনাচার। সাময়িক ব্যবহারের কথা বলে এখন স্থায়ী অবকাঠামো তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এটা হচ্ছে জনগণের সঙ্গে রাষ্ট্র বিশ্বাসভঙ্গ করেছে।

পাভেল পার্থের সঞ্চালনায় সংহতি সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বাপা সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির, বিআইপির সাবেক সভাপতি আকতার মাহমুদ, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে, পরিজার সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ উজ্জল প্রমুখ।

এই সমাবেশে সংহতি জানিয়েছে স্থানীয় এলাকাবাসী, ধানমন্ডি সাতমসজিদ সড়ক গাছ রক্ষা আন্দোলন, বাংলাদেশ
পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবি সমিতি (বেলা), বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ প্ল্যানার্স (বিআইপি), নারীপক্ষ, বারসিক, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), পরিজা, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, দুনিয়াদারি আর্কাইভ, প্রাকৃতিক কৃষি, স্ট্যান্ড ফর আওয়ার এন্ডেঞ্জার্ড ওয়াইল্ডলাইফ (সিউ), গ্রীন ভয়েস, সিআরবি রক্ষা আন্দোলন-চট্টগ্রাম, ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা), তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষা আন্দোলন, বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস), ডব্লিউবিবি ট্রাস্ট, বরেন্দ্র ইয়ুথ ফোরাম, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, প ফাউন্ডেশন, ইনস্টিটিউট ফর প্লানিং এন্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি), বাংলাদেশ প্রকৃতি সংরক্ষণ জোট (বিএনসিএ), নাট্যদল প্রাচ্যনাট, নদী সুরক্ষা সংগঠন নোঙ্গর বাংলাদেশ, জলপুতুল পাপেট স্টুডিও, সেভ ফিউচার বাংলাদেশ, সবুজ পাতা, অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, পরিবেশ আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, আলোকচিত্রী নাসির আলী মামুন, লেখক শাহীন আখতারসহ নানান শ্রেণী পেশার ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান।

জানা যায়, ফার্মগেটের আনোয়ারা উদ্যানের মালিকানা গণপূর্ত অধিদপ্তরের। ২০১৬ সালে সেটি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনকে (ডিএনসিসি) হস্তান্তর করে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। শর্ত ছিল, সেখানে কোনো স্থায়ী স্থাপনা বা অবকাঠামো নির্মাণ করা যাবে না। রাখা যাবে না গাড়ি। আর হস্তান্তরের তারিখ থেকে তিন বছর পর চুক্তি নবায়ন করা হবে। কিন্তু মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ শুরু হলে ডিএনসিসিকে দেওয়া সেই শর্ত ধরে রাখতে পারেনি গণপূর্ত।

এছাড়াও

“অভিভাবকহীন সন্তানদের থেকে রাষ্ট্রও যেন মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে”

সাঈদুর রহমান রিমন: বৈষম্যের মাধ্যমে সৃষ্ট বঞ্চনা, নিপীড়নের ‘কোটা বিরোধী’ যৌক্তিক ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে নেমেছে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *