Friday , July 26 2024
Breaking News

গণধর্ষণের পরিকল্পনাকারী মামুনের ইয়াবার বিক্রির হটজোন জাবি ক্যাম্পাস বটতলা

মো: সোলায়মান : জাবি ক্যাম্পাসে নিয়মিত যাতায়াত ছিল নারীকে গণধর্ষণের মূল পরিকল্পনাকারী মামুনুর রশিদ ওরফে মামুন (৪৪)। মামুনের ইয়াবার বিক্রির হটজোন জাবি ক্যাম্পাস বটতলা। মাদক কারবারি মামুন নিয়মিত কক্সবাজার থেকে দুই থেকে আড়াই হাজার পিস ইয়াবা এনে বিক্রি করতেন।

বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) আলোচিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের হলরুমের একটি কক্ষে স্বামীকে আটকে রেখে তার স্ত্রীকে গণধর্ষণের মূল পরিকল্পনাকারী মামুনুর রশিদ ওরফে মামুনকে রাজধানীর ফার্মগেট এলাকা থেকে এবং ধর্ষণের অন্যতম সহায়তাকারী মো. মুরাদকে (২২) নওগাঁ থেকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

মূলহোতা মামুনকে জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের বরাতে র‌্যাব জানিয়েছে, মাদক কারবারি মামুন ২০১৭ সাল থেকে জাবি ক্যাম্পাসের সিনিয়র প্রভাবশালী শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় ক্যাম্পাসে মাদক কারবার করতেন। হরহামেশাই ক্যাম্পাসে নারী নিপীড়ন ধর্ষণসহ শ্লীনতাহানির ঘটনায় জড়িত।

বৃহস্পতিবার(৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, গত ৩ ফেব্রুয়ারি রাত আনুমানিক সাড়ে ৯টার দিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় মীর মশাররফ হোসেন হলের ‘এ’ ব্লকের ৩১৭ নম্বর কক্ষে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটে।

পরবর্তীতে ঘটনার দিন রাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের হল কর্তৃপক্ষের সহায়তায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ৪ জনকে আটক করে। ওই ঘটনায় ভিকটিমের স্বামী বাদী হয়ে ঢাকার আশুলিয়া থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি গণধর্ষণ মামলা দায়ের করেন।

চাঞ্চল্যকর গণধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে আইনের আওতায় নিয়ে এসে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মানবন্ধব, বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে। চাঞ্চল্যকর গণধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে র‌্যাব।

এরই ধারাবাহিকতায় গত রাতে র‌্যাব-৪, র‌্যাব-২ এবং র‌্যাব-৫ এর যৌথ অভিযানে রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে চাঞ্চল্যকর গণধর্ষণের মূলপরিকল্পনাকারী মামুনুর রশিদ ওরফে মামুন (৪৪) ও নওগাঁ সদর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে অন্যতম আসামি মো. মুরাদ (২২)কে গ্রেপ্তার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা গণধর্ষণে তাদের সম্পৃক্ততার বিষয়ে তথ্য প্রদান করে।

কমান্ডার মঈন বলেন, গ্রেপ্তারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রেপ্তার মামুন প্রায় ৬/৭ বছর যাবত মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত। মামুন কক্সাবাজারের টেকনাফ হতে প্রতি মাসে কয়েক দফায় প্রায় ৭/৮ হাজার ইয়াবা সংগ্রহ করে তা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশের এলাকাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশকিছু মাদকসেবি শিক্ষার্থীকে সরবরাহ করতো।

এছাড়াও গ্রেপ্তারকৃত মামুন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় মাদক বিক্রির সুবাদে মামলার ১নং আসামি মোস্তাফিজুর রহমানসহ বেশ কয়েকজন সিনিয়র ছাত্রদের সাথে তার সখ্যতা তৈরি হয় এবং মাঝে মাঝে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসে মাদকসহ রাত্রিযাপন করতো এবং অন্যান্য ছাত্রদের সাথে মাদক সেবন করতো বলে জানায়।

তিনি বলেন, মামুন জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, গ্রেপ্তার মামুনের সঙ্গে ভুক্তভোগীর স্বামীর একই এলাকায় বসবাসের কারণে বিগত ৩/৪ বছর পূর্বে তাদের মধ্যে পরিচয় হয়। পরিচয়ের সুবাদে মামুন মাঝে মধ্যে ভুক্তভোগীর স্বামী জাহিদ মিয়া ওরফে রবিনের মাধ্যমেও বিশ্ববিদ্যালয়সহ আশেপাশের এলাকায় মাদক সরবরাহ করতো বলে দাবি মামুনের।

কমান্ডার মঈন বলেন, বেশিদিন একস্থানে থাকতো না মামুন। মাদক কারবারের কারণে কিছুদিন পূর্বে গ্রেপ্তার মামুনের থাকার জায়গার সমস্যা সৃষ্টি হয়। তখন সে ভুক্তভোগীর স্বামীকে ফোন দিয়ে কিছুদিনের জন্য তাদের বাসায় অবস্থান করবে বলে জানায়। গ্রেপ্তার মামুন ভুক্তভোগীর ভাড়াকৃত বাসায় সাবলেট হিসেবে প্রায় ৩/৪ মাস অবস্থান করায় তাদের মধ্যে সখ্যতা তৈরি হয়।

ঘটনার পূর্বে মামলার ১নম্বর আসামি মোস্তাফিজুর গ্রেপ্তার মামুনের নিকট অনৈতিক কাজের ইচ্ছা পোষণ করলে পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক মামুন গত ৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে ভুক্তভোগীর স্বামীকে ফোন দিয়ে জানায় মোস্তাফিজুর রহমান নামের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বড় ভাই বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে তার থাকার ব্যবস্থা করেছে বিধায় সে এখন থেকে বিশ্ববিদ্যালয় হলে থাকবে। তাই মোস্তাফিজের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে তার সাথে দেখা করতে আসতে বলে মামুন।

মামুনের কথামতো ওই দিন সন্ধ্যার দিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের ৩১৭ নম্বর কক্ষে দেখা করে জাহিদ। পরবর্তীতে ভুক্তভোগীর স্বামী জাহিদকে গ্রেপ্তার মামুন তার অন্যতম সহযোগী মোস্তাফিজ, মুরাদ, সাব্বির, সাগর সিদ্দিক ও হাসানুজ্জামানের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।

গ্রেপ্তার মামুন কৌশলে ভুক্তভোগীর স্বামীকে তাদের বাসায় থাকাকালীন তার ব্যবহৃত কাপড় আনতে তার স্ত্রীকে (ভিকটিম) ফোন দিতে বলে। মামুনের কথায় জাহিদ ফোন করলে রাত ৯টার দিকে মামুনের ব্যবহৃত কাপড়সমূহ একটি ব্যাগে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের সামনে উপস্থিত হয়।

ঐ সময় পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক গ্রেপ্তার মামুন ও মামলার ১নং আসামি মোস্তাফিজ কৌশলে গ্রেপ্তার মুরাদকে ভিকটিমের স্বামী ও গ্রেপ্তারকৃত মামুনের ব্যবহৃত কাপড়ের ব্যাগসহ হলের ৩১৭নং রুমে নিয়ে যেতে বলে। গ্রেপ্তার মুরাদ ভুক্তভোগীর স্বামীকে নিয়ে হলের রুমে অবস্থান করে।

এসময় গ্রেপ্তার মামুন ও মামলার ১ নম্বর আসামি মোস্তাফিজ ভিকটিমকে কৌশলে হলের পাশে নির্জন স্থানে নিয়ে গিয়ে জোড়পূর্বক পর্যায়ক্রমে গণধর্ষণ করে। পরে ভয়ভীতি দেখিয়ে বাসায় চলে যেতে বলে। গ্রেপ্তার মামুন ও মোস্তাফিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের রুমে গিয়ে স্বামী জাহিদকেও বাসায় চলে যেতে বলে।

স্বামী ভুক্তভোগী স্ত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনা জানতে পেরে থানায় গিয়ে মামলা দায়ের করে। ঘটনা জানাজানি হলে মামুন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেপ্তার এড়াতে রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় আত্মগোপন করে। গ্রেপ্তার মুরাদ গণধর্ষণে বিষয়টি ঘটনার সময় না জানলেও থানায় মামলা হওয়ার পর সেও পালিয়ে নওগাঁ এলাকায় আত্মগোপন করে। পরবর্তীতে তারা উভয় আত্মগোপনে থাকাকালীন সময় র‌্যাব কর্তৃক গ্রেপ্তার হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের বরাতে কমান্ডার মঈন বলেন, গ্রেপ্তার মামুন প্রায় ২০ বছর পূর্বে ঢাকার জুরাইন এলাকায় এসে গার্মেন্টস কর্মী হিসেবে চাকুরি করে। পরবর্তীতে সে আশুলিয়া এলাকায় এসে গার্মেন্টসের চাকুরি পাশাপাশি মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত হয়।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশের এলাকাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু মাদকসেবী শিক্ষার্থীকে মাদক সরবরাহ করা ফলে তাদের সাথে সখ্যতা তৈরি হয়। পরবর্তীতে সে গার্মেন্টসের চাকুরি ছেড়ে দিয়ে ২০১৭ সাল থেকে পুরোপুরি মাদক ব্যবসায় জড়ায়। তার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় মাদক সংক্রান্তে ৮টি মামলা রয়েছে এবং ইতিপূর্বে এসকল মামলায় একাধিক বার কারাভোগ করেছে বলে জানা যায়।

গ্রেপ্তার মুরাদ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। সে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকতো। তার বিরুদ্ধে নওগাঁ থানায় মারামারি সংক্রান্তে ১টি জিডি রয়েছে বলে জানা যায় । ৩১৭ নম্বর কক্ষে তার নামে বরাদ্দ হলেও থাকতো অন্য রুমে।

এক প্রশ্নের জবাবে কমান্ডার মঈন বলেন, মামুন নিয়ম মত কক্সবাজার থেকে মাদক আনতো। তার মাদক কারবারের হোট জোন ছিল ওই বিশ্ববিদ্যালয়, বিশেষ করে বড়তলা এলাকা। ক্যাম্পাসে সে মাদক বিক্রি ছাড়াও প্রায়শই ক্যাম্পাসে নারীদের হেনস্তা নিপীড়ন শ্লীলতাহানিসহ ধর্ষণে ঘটনার সঙ্গে জড়িত। তবে ভুক্তভোগী অনেক নারী ভয়ভীতির কারণে বিষয়টি প্রকাশ করেননি। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

এছাড়াও

বাবার সিন্দুক থেকে টাকা নিয়ে মেয়ে তুলে দিলেন স্বামীর হাতে, গ্রেপ্তার ২

মো: সোলায়মান: রাজধানীর মোহাম্মদপুরের একটি বাসা থেকে এক কোটি ৬৬ লাখ টাকা চুরির ঘটনায় অজ্ঞাতনামা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *