Sunday , November 10 2024
Breaking News

জাবির ৪০ তম বার্ষিক সিনেট সভা আজ

জাবি প্রতিনিধি :

১৯৭১ সালের ১২ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে দীর্ঘ ৫৩ বছরে মাত্র ৯ বার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯২ সালে। তারপর দীর্ঘ ৩০ বছর নেই কোনো ছাত্র সংসদ নির্বাচন। ফলে পাঁচজন ছাত্র প্রতিনিধি ছাড়াই প্রতিবার সিনেট অধিবেশন সম্পন্ন হয়ে আসছে। এবারেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। ছাত্র প্রতিনিধি ছাড়াই  আজ শনিবার (২৪ জুন) বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট হলে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ৪০তম বার্ষিক সিনেট অধিবেশন। উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে এ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। তবে ছাত্র প্রতিনিধি ছাড়া এই সিনেট অধিবেশনকে ‘অপূর্ণাঙ্গ’ আখ্যা দিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৭২ সালে প্রথম জাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, যাতে গোলাম মোর্শেদ ভিপি ও রোকন উদ্দিন জিএস নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৭৪, ১৯৭৯, ১৯৮০, ১৯৮১, ১৯৮৯, ১৯৯০, ১৯৯১ ও ১৯৯২ সালসহ মোট নয়বার জাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। পরবর্তী বছর অর্থাৎ ১৯৯৩ সালের ২৯ জুলাই এক ছাত্রের বহিষ্কারকে কেন্দ্র করে ছাত্র ও শিক্ষকদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধলে তৎকালীন প্রশাসন জাকসু ও হল সংসদ বাতিল করে। সর্বশেষ ২০১৩ সালে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনের সময় জাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলেও নানা জটিলতায় তা অনুষ্ঠিত হয়নি। তারপর থেকে বেশ কয়েকজন উপাচার্য জাকসু নির্বাচনের আশ্বাস দিয়েছেন এবং নির্বাচনের জন্য কমিশন গঠন করেছেন, কিন্তু তা আর আলোর মুখ দেখেনি। ২০২২ সালের ৩৯তম সিনেট অধিবেশনেও উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলম জাকসু নির্বাচনের আশ্বাস দেন। তবে বছর পেরিয়ে গেলেও নির্বাচন সংক্রান্ত কোনো অগ্রগতি নেই।

বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ-১৯৭৩ অনুযায়ী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্ষদ হলো সিনেট। সিনেটে অন্যান্য প্রতিনিধির সঙ্গে অধ্যাদেশের ১৯(১) এর (ক) ও ১৯ (২) ধারা মেনে জাকসু নির্বাচনের ব্যবস্থা করা এবং উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনে সিনেটে ৫ জন ছাত্র প্রতিনিধির বিষয়টি ৩০ বছরে নিশ্চিত করতে পারেনি প্রশাসন। ছাত্র প্রতিনিধি ছাড়াই সিনেট অধিবেশনের ফলে স্বাভাবিকভাবেই শিক্ষার্থীদের চাওয়া- পাওয়ার প্রতিফলন ঘটেনি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। অ্যাক্টের ১৯(২) ধারায় বলা হয়েছে, ছাত্র প্রতিনিধি ছাড়া অন্যান্য সিনেট সদস্যরা তিন বছরের জন্য দায়িত্বে থাকবেন। আর ছাত্র প্রতিনিধিরা থাকবেন এক বছরের জন্য। তবে তারা পরবর্তী প্রতিনিধি নির্বাচিত, মনোনীত অথবা নিযুক্ত হওয়া পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। অ্যাক্ট অনুযায়ী সিনেটের মোট সদস্য ৯২ জন (উপ-উপাচার্য একজন হলে)। তবে এবারের সিনেটে রয়েছেন ৮১ জন সদস্য। বাকি আসনগুলো শূন্য রয়েছে।

ইতোমধ্যে সবসিনেট সদস্যের মেয়াদ শেষ হয়েছে। মেয়াদোত্তীর্ণ প্রতিনিধিদের নিয়েই বসছে এবারের অধিবেশন। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্ট সিনেটরদের একাংশ। তাদের দাবি, সুযোগ থাকার পরও সিনেট নির্বাচনের দিকে এগুচ্ছে না বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, সিনেট নির্বাচন দিলে উপাচার্য তার সমর্থকদের নির্বাচিত করে নিয়ে আসতে ব্যর্থ হবেন- যা তার টিকে থাকার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল বলেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সবসময় শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করে। কিন্তু সিনেটে ছাত্রদের প্রতিনিধিত্ব না থাকায় আমরা দাবি নিয়ে ছাত্রদের পাশে দাঁড়াতে পারছি না। ছাত্রপ্রতিনিধি ছাড়া সিনেট অধিবেশন কোনোভাবেই কাম্য নয়। ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক আলিফ মাহমুদ বলেন, এই প্রশাসন কোনোভাবেই শিক্ষার্থীবান্ধব নয়। যদি তাই হতো তবে সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধির উপস্থিতি নিশ্চিত করত। আমরা চাই, সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি নিশ্চিত করেই অধিবেশন হোক।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট জাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক কনোজ কান্তি রায় বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় যাদের জন্য কাজ করে, তাদের পক্ষে সিনেটে কথা বলার কেউ নেই। এতে স্বভাবতই ছাত্ররা বঞ্চিত হয় এবং সিনেটের আলাপগুলো প্রশাসনের পক্ষেই চলে যায়। এটা শুধু শিক্ষকদের অধিকার রক্ষার একটি সভা। জাকসু নির্বাচন না দিয়ে প্রশাসন শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি থেকে বঞ্চিত করছে।

উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলম বলেন, জাকসু নির্বাচনের জন্য সরকারের পূর্ণ সমর্থন ও সহযোগিতা এবং অতিরিক্ত ফোর্স প্রয়োজন। সেজন্য আমরা চাইলেই নির্বাচন দিতে পারিনি। ডিসেম্বরের আগে নির্বাচন দেওয়াও সম্ভব হবেনা। যেহেতু আমি কথা দিয়েছি, সুযোগ বুঝে জাকসু নির্বাচন দেবো।

এছাড়াও

বৃহস্পতিবার ‘রিমেমবারিং দ্য হিরোজ’ কর্মসূচি

নতুন কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) ‘রিমেমবারিং দ্য হিরোজ’ কর্মসূচি পালন …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *