Saturday , July 27 2024
Breaking News

কাপড়ের ব্যবসার আড়ালে প্রতারণা চক্র গড়ে তুলছেন নাইজেরিয়ানরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া আইডি খুলে বিভিন্ন প্রোফাইল ঘেটে ঘেটে ব্যবসয়ী, চাকরিজীবী উচ্চবিত্তসহ সহজ সরল মানুষকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠায়। ভিকটিমদের কাছে নিজেকে পশ্চিমা বিশ্বের একটি উন্নত দেশের ধনী ব্যক্তি হিসাবে পরিচয় দিয়ে ভিকটিম’কে তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের মাধ্যমে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলে।

পরে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও গভীর করার জন্য একটি উপহার পাঠাতে চায়। ভিকটিমের অনিচ্ছা সত্ত্বেও উপহারের মিথ্যা নাটক তৈরি করে প্রতারক চক্রের এক সদস্য কাস্টমস অফিসার সেজে ভিকটিমকে ফোন করে। পরবতীতে ভিকটিম বন্ধুত্বের মান রাখতে ওই পার্সেল গ্রহন করার জন্য প্রতারক চক্রটিকে বিপুল পরিমাণ টাকা দিতে বাধ্য হয়। এই চক্রের ২ বিদেশি নাগরিকসহ সংঘবদ্ধ আন্তর্জাতিক প্রতারক চক্রের মূলহোতা ও বিদেশি নাগরিকসহ ৪ জনকে গ্রেফতার  করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব-১০)।

গতকাল বুধবার (২৪ মে) রাতে রাজধানীর বসুন্ধারা আবাসিক ও কদমতলীর শামীমবাগ এলাকায় অভিযান চালিয় তাদের গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারকৃতরা হলো, নাইজেরিয়ান নরাগিরক চার্লস ইফানাডি (২৭)  ও ফ্র্যাঙ্ক কোকো (৩৫)। তাদের বাংলাদেশি সহযোগি শফি মোল্লা (৩৬), ও মোছা. মৌসুমি খাতুন (২৭)। এসময় তাদের কাছ থেকে একটি মোটর সাইকেল, প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ৮টি মোবাইল, ভুয়া ইনভয়েস জব্দ করা হয়।

বৃহস্পতিবার (২৫ মে) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান র‌্যাব-১০ এর অধিনায়ক এডিশনাল ডিআইজি মো. ফরিদ উদ্দিন।

তিনি বলেন, মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখান উপেজেলার এক নারীর (২৬) সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম (ইনস্টাগ্রাম) এ বিদেশী এক ব্যক্তির পরিচয় হয়। সেই ব্যক্তি গত (১৭ মে) একটি পার্সেল পাঠানোর কথা বলে ঠিকানা নেয়। পার্সেলটি বিমানবন্দর থেকে সংগ্রহ করতে বলা হয়। গত ১৮ মে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর কাস্টমসের পরিচয় অপর এক নারী ফোন করেন। তিনি ভুক্তভোগিকে জানায় তার নামে অতি মূল্যবান পার্সেল এসেছে। পার্সেলটি ডেলিভারি করতে কাস্টমসের চার্জ হিসেবে ৬০ হাজার টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ করতে বলা হয়। পরবর্তীতে ব্যাংক একাউন্ট নম্বর দেওয়া হয়। সেই ব্যাংক একাউন্টের ৩৫ হাজার টাকা পাঠান। এরপর সেই নারী ভুক্তভোগিকে সিকিউরিটির জন্য আরও ৩০ হাজার টাকা পাঠাতে বিভিন্নভাবে চাপ দিতে থাকে। সে বাধ্য হয়ে ৩০ হাজার টাকা পাঠায়। পরে ভুক্তভোগি পার্সেলর জন্য ওই নম্বরে যোগাযোগ করলে ভিকটিম মহিলা জানায় তার পার্সেল তার বাসায় পৌঁছে যাবে। পরবর্তীতে ভিকটিম পার্সেল জন্য যোগাযোগ করলে উল্টাপাল্টা কথা বলে আরোও ৮ হাজার ৩২০ টাকা বিকাশের মধ্যমে পাঠাতে বলে। পরে প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে র‍্যাবের কাছে অভিযোগ করেন।

গ্রেফতারকৃত আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে ফরিদ উদ্দিন জানান, আসামিরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া আইডি খুলে বিভিন্ন প্রোফাইল ঘেটে ঘেটে ব্যবসয়ী, চাকরিজীবী উচ্চবিত্তসহ সহজ সরল মানুষের সঙ্গে বন্ধত্ব করে। পরে নিজেকে পশ্চিমা বিশ্বের একটি উন্নত দেশের ধনী ব্যক্তি হিসাবে পরিচয় দিয়ে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলে। বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও গভীর করার জন্য একটি উপহার পাঠানোর প্রস্তাব দিয়ে ঠিকানা হাতিয়ে নেয়। উপহারের মিথ্যা নাটক তৈরি করে প্রতারক চক্রের এক সদস্য কাস্টমস অফিসার সেজে ভুক্তভোগিদের ফোন করে। পরবতীতে ভিকটিম বন্ধুত্বের মান রাখতে উক্ত পার্সেল গ্রহন করার জন্য প্রতারক চক্রটিকে বিপুল পরিমাণ টাকা দিতে বাধ্য হয়।

র‍্যাব-১০ এর অধিনায়ক বলেন, আন্তর্জাতিক প্রতারক চক্রের বিদেশী নাগরিকেরা ভ্রমণ ভিসায় বাংলাদেশে এসে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় ভাড়া বাসায় অবস্থান নিয়ে গার্মেন্টস ব্যবসাসহ বিভিন্ন কাজ শুরু করে। গার্মেন্টস ব্যবসার আড়ালে তারা বাংলাদেশী সহযোগিদের নিয়ে অভিনব প্রতারণার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। গ্রেফতারকৃত চার্লস ইফানাডির নামে আরও মামলা রয়েছে। মৌসুমি ও শফি আন্তর্জাতিক অপরাধ চক্রের বাংলাদেশী সদস্য। মূলত তাদের মাধ্যমেই এই প্রতারক চক্রের বিদেশীরা ভুক্তভোগিদের সঙ্গে বন্ধুত্ব তৈরি করে। কাস্টমস্ অফিসার পরিচয় দিয়ে কৌশলে টাকা হাতিয়ে নিয়ে আসছিল।

তিনি আরও বলেন, চার্লস ইফানাডি ২০১৯ সালে ভ্রমণ ভিসায় বাংলাদেশে আসে। মাদক মামলায় তার পাসপোর্ট কোর্টে জব্দ রয়েছে। পরবর্তীতে সে পলাতক থেকে কাপড়ের ব্যবসার শুরু করে। বাংলাদেশ থেকে কাপড় কিনে নাইজেরিয়াতে রপ্তানি করতো ও বিভিন্ন জায়গায় নিজেকে গার্মেন্টস ব্যবসায়ী বলে পরিচয় দিত। আন্তর্জাতিক প্রতারক চক্রের মূলহোতা। কাপড়ের ব্যবসার আড়ালে সে প্রতারণা করে আসছিল।

আসামি ফ্র্যাঙ্ক কোকোর বিষয়ে ফরিদ উদ্দিন বলেন, ফ্র্যাঙ্ক কোকোর ২০২১ সালে ভ্রমণ ভিসায় বাংলাদেশে আসে। এর পরে সহযোগি চার্লস ইফানাডির সঙ্গে পরিচয়ে হয়। চার্লসের সঙ্গে কাপড়ের ব্যবসা শুরু করে। নিজেকে গার্মেন্টস ব্যবসায়ী বলে পরিচয় দেয়। চার্লসের প্রধান সহযোগি হিসেবে কাজ করে আসছিল।

এক প্রশ্নের জবাবে ফরিদ উদ্দিন বলেন, আমরা ৫ জন ভিকটিম পেয়েছি। ভুক্তভোগিরা এই ঘটনায় লজ্জিত। লোভের কারণেই তারা প্রতারিত হয়েছেন। চারজন ভিকটিম ঢাকার আর একজন ভিকটিম ফেনীর।

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিদেশিদের ডিপোড করার অপেক্ষায় এদের পাসপোর্ট জব্দ করা হয়েছে। সরকারি খরচে এদের ডিপোড প্রক্রিয়াধীন আছে। দেশে দুই হাজারের মতো নাইজেরিয়ান আছে। এদের ৫০% শতাংশ অবৈধভাবে দেশে বসবাস করছে।

এছাড়াও

বাবার সিন্দুক থেকে টাকা নিয়ে মেয়ে তুলে দিলেন স্বামীর হাতে, গ্রেপ্তার ২

মো: সোলায়মান: রাজধানীর মোহাম্মদপুরের একটি বাসা থেকে এক কোটি ৬৬ লাখ টাকা চুরির ঘটনায় অজ্ঞাতনামা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *