নিজস্ব প্রতিনিধি : স্বাস্থ্যসম্মতভাবে খাবার তৈরি ও বিক্রি না করার অপরাধে কাউকে শাস্তি দেওয়ার আগে বিষয়টি তাকে জানানো দরকার বলে মনে করেন অভিনেতা ও ডা. এজাজুল ইসলাম।
তার মতে, যিনি খাবার তৈরি বা বিক্রি করছেন, তিনি হয়তো জানেনই না কীভাবে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে খাবার তৈরি, পরিবেশন বা বিক্রি করতে হয়। তাই তাকে এর জন্য শাস্তি দেওয়ার আগে সচেতন করা দরকার।
শনিবার (৮ এপ্রিল) বিকেলে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের ইফতার বাজার মনিটরিংয়ে যুক্ত হয়ে এই অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন বাংলা নাটকের জনপ্রিয় ওই অভিনেতা। রাজধানীর পান্থপথ এলাকায় এই মনিটরিং কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।
মনিটরিং কার্যক্রমে দেখা যায়, বেশিরভাগ বিক্রেতা মুখে মাস্ক, হাতে গ্লাভস ও মাথায় সার্জিক্যাল ক্যাপ পরে ইফতার বিক্রি করছেন। কিন্তু তারা সেগুলো সঠিকভাবে ও সাবধানতার সঙ্গে ব্যবহার করছেন না। যে গ্লাভস পরে খাবার ধরা হচ্ছে, সেই গ্লাভস পরেই আবার টেবিলে হাত রাখা হচ্ছে, খাবার প্যাকেট করা হচ্ছে, ক্যালকুলেটরে হিসাব করা হচ্ছে, টাকা ধরা হচ্ছে। তাই রাস্তার পাশে এসব ইফতার বিক্রিকারীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়ে সচেতন করেন ডা. এজাজ।
মনিটরিং শেষে তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, অনেকে বলছেন, যারা স্বাস্থ্যসম্মতভাবে খাবার বিক্রি করছেন না, তাদের শাস্তি দেওয়া দরকার, জরিমানা করা দরকার। কিন্তু আমি এটার পক্ষে না। আমি মনে করি কাউকে শাস্তি দেওয়ার আগে তাকে সচেতন করা দরকার।
তিনি আরো বলেন, আমরা আজকে যাদের সচেতন করলাম, তারা আসলে স্বাস্থ্য সচেতনতার বিষয়টি জানেই না। তারা গ্লাভস ব্যবহার সম্পর্কে জানে না। গ্লাভস পরার পর কীভাবে খাবার প্যাকেট করতে হয়, কীভাবে খাবার দিতে হয়, স্বাস্থসম্মতভাবে কীভাবে খাবার রাখতে হয়, সেটি সম্পর্কে তারা জানেন না। কারণ যিনি খাবার দিচ্ছেন, যিনি খাবার বানাচ্ছেন, তিনি ততটা শিক্ষিত না। তাই কাউকে শাস্তি দেওয়ার আগে বিষয়টি তাকে জানান দেওয়া জরুরি।
ওই অভিনেতা বলেন, একটি লোক যদি ঘুমায়, তার তো কোনো দোষ নেই। কিন্তু কেউ যদি জেগে জেগে ঘুমায়, তার শাস্তি পাওয়া দরকার। আমরা আজকে মনিটরিং এ যে জিনিসটি দেখলাম, তা হলো- স্বাস্থ্য শিক্ষাটা খুবই জরুরি। আমরা সেই চেষ্টা করছি।
তিনি বলেন, আমরা আজকে যেই সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করলাম, এটি খুবই স্বল্প পরিষরে হয়েছে। আমি মনে করি এটা আরও বড় পরিসরে দেশের আনাচে-কানাচে প্রতিটি প্রান্তে করা দরকার। সবাইকে জানান দেওয়া দরকার। আশা করি, সবাইকে জানান দেওয়ার বিষয়টি যদি সফল হয়, তখন মানুষ স্বাস্থ্যসম্মত খাবার পাবে।
জীবাণুমুক্ত খাবার দেওয়া এবং নেওয়া দুটোই জরুরি উল্লেখ করে ওই চিকিৎসক বলেন, আমাদের ক্রেতাদেরও সচেতন হতে হবে। যিনি খাবার দিচ্ছে তিনি হয়তো ততটা শিক্ষিত না। কিন্তু যিনি খাবার নিচ্ছেন, তিনি তো শিক্ষিত। সুতরাং বিক্রেতাকে ক্রেতার বলা উচিত, মাস্ক-গ্লাভস পরে খাবার দেওয়ার কথা। তা না হলে সেখান থেকে খাবার না নেওয়া। তাহলে বিক্রেতা সচেতন হবে এবং স্বাস্থ্যসম্মতভাবে খাবার বিক্রি করবে। এভাবে আমাদের একে অন্যকে সচেতন করতে হবে।
নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য ড. আব্দুল আলীম বলেন, পবিত্র রমজান মাসের পুরো সময় আমরা ইফতার বাজার মনিটরিং ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছি। বিভিন্ন জায়গায় আমরা আমাদের মনিটরিং বুথ বসিয়েছি। আমাদের উদ্দেশ্য হলো রোজাদাররা যাতে সুস্থ স্বাভাবিকভাবে রোজাটা রাখতে পারে, তাদের যাতে কোনো ধরনের পেটের সমস্যায় ভুগতে না হয়।
নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য বলেন, নোংরা পরিবেশে খাবার তৈরি, পরিবেশন ও বিক্রি যাতে না হয়, সেটি আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। যারা ইফতার বিক্রি করছেন, তাদের আমরা হাতে হ্যান্ডগ্লাভস ও মাথায় ক্যাপ পারাচ্ছি। খাবারে যাতে ভেজাল মেশানো না হয় সেই বিষয়ে আমরা বিক্রেতাদের সচেতন করছি।
তিনি বলেন, আমরা এই সচেতনতামূলক কার্যক্রমের পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ আদালতও পরিচালনা করছি। রমজান মাস শুরু হওয়ার আগে আমরা ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে ২শ জনকে এবং প্রতি জেলায় ৩০ জন করে ইফতার সামগ্রী প্রস্তুতকারীদের প্রশিক্ষণ দিয়ছে। কীভাবে তারা ইফতার তৈরি করবে,কীভাবে বিক্রি করবে সেই বিষয়ে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে৷
তিনি আরো বলেন, রমাজনে ঢাকায় আমাদের ৫টি জায়গায় মনিটরিং বুথ তৈরি করা হয়েছে৷ সেখানে সব সময় ম্যাজিস্ট্রেট থাকেন। সেসব বুথ থেকে সবাইকে সচেতন যেমন করা হয়, তেমনি বাজার থেকে বিভিন্ন ইফতারসামগ্রী কিনে এনে সেগুলো টেস্টিং কিটের মাধ্যমে পরীক্ষাও করা হচ্ছে। এ সময় নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের অতিরিক্ত পরিচালক অমিতাভ মণ্ডলসহ সংস্থাটির অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।