আর্ন্তজাতিক বার্তা : ইউক্রেইনের লিমান শহরে স্বাভাবিক জীবনের লক্ষণ নেই বললেই চলে।চারিদিকে ধ্বংসস্তুপ, পুড়ে যাওয়া ঘরবাড়ির মধ্যে কয়টা মানুষ আর কয়টা কুকুর তাও হাতে গোনা যায়। যুদ্ধের আগে শহরটিতে প্রায় ২০ হাজার মানুষ থাকলেও এখন তা জনশূন্য। এই বিরান শহরে একমাত্র প্রাণের স্পন্দন হচ্ছে, সাঁজোয়া যানে চড়ে হাত নেড়ে হৈ-হুল্লোড় করতে করতে এগিয়ে চলা ইউক্রেইনীয় সেনাদের বহর। পাইন জঙ্গলের ধারের রাস্তা দিয়ে যারা শহর ছেড়ে যাচ্ছে। আর পেছনে ফেলে যাচ্ছে রুশ সেনাদের মৃতদেহ।
ইউক্রেইনীয় সেনাদের সঙ্গে লড়াইয়ে রুশ বাহিনীকে যে মূল্য দিতে হয়েছে, এই সেনাদের মৃতদেহগুলো তারই চিহ্ন। নিহত পাঁচ রুশ সেনার ফুলে যাওয়া, বিকৃত মৃতদেহ পাশাপাশি পড়ে আছে, যারা একসময় কারও স্বামী কিংবা কারও ছেলে ছিল।তারা পুরোপুরি ইউনিফর্ম পরা, পায়ের বুট তখনও আছে, যেন লড়াইয়ের ময়দানে ফিরতে প্রস্তুত। এই রুশ সেনারা পালানোর চেষ্টার সময় মারা পড়েছে বলেই মনে হয়।
সেখানকার দৃশ্য বর্ণনায় বিবিসি সাংবাদিকরা জানান, কাছেই তারা পড়ে থাকতে দেখেছেন রুশ সেনাদের ফেলে যাওয়া ইউনিফর্ম, স্লিপিং ব্যাগ, রেশনের প্যাকেট এবং সেনা ব্যাকপ্যাক। যে ব্যাকপ্যাকে নামও লেখা ছিল। কিন্তু সেটির মালিক কে তা অজানা। ইউক্রেইনের মানবিক ত্রাণ সংগঠনের দুই তরুণ স্বেচ্ছাসেবী খুব নিঃশব্দে, সতর্কতার সঙ্গে সেখানে মৃতদেহ গোনা এবং সেগুলো শনাক্ত করার মতো কিছু পাওয়া যায় কিনা তা খুঁজে বেড়াচ্ছিল। পরে তারা কালো ব্যাগে ভরে লাশগুলো গাড়িতে তুলে নিয়ে চলে যায়। এর মধ্য দিয়ে শেষপর্যন্ত যুদ্ধক্ষেত্র থেকে বিদায় হয় রাশিয়ার পরাজিত কিছু সেনা।
লিমান শহরটি দোনেৎস্ক অঞ্চলে অবস্থিত। ইউক্রেইনের যে চারটি আংশিক-অধিকৃত অঞ্চলকে রাশিয়া গত শুক্রবার নিজেদের ভূখণ্ড বলে ঘোষণা করেছে দোনেৎস্ক তার একটি।লিমান শহরটি রাশিয়ার রসদ কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল। এ শহর দখলমুক্ত হওয়া ইউক্রেইনের জন্য কৌশলগতভাবে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন যখন ইউক্রেইনের চার অঞ্চলকে নিজদেশের অন্তর্ভুক্ত করার ঘোষণা দিচ্ছিলেন, তখনই লিমানে রুশ বাহিনীকে ঘিরে ফেলেছিল ইউক্রেনীয় বাহিনী। এ পরিস্থিতিতে গত শনিবার রুশ বাহিনী শহরটি থেকে পিছু হটে।
সেই শহরেই এখন রাশিয়ার সেনাদের ফেলে যাওয়া একটি টি-৭২ ট্যাংকের ওপর উড়ছে ইউক্রেইনের নতুন পতাকা। হাসিমুখে এক ইউক্রেইনীয় সেনার উক্তি, আমরা জিততে চলেছি। আমার খুব, খুবই ভাল লাগছে। লিমানে যা ঘটেছে তা কেবল প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের পরাজয়ই নয়, এটি তার জন্য পুরোপুরি বিব্রতকর। বিশ্ববাসীর সামনে দোনেৎস্কসহ চার ইউক্রেইনীয় অঞ্চল `চিরতরে রাশিয়ার’ বলে পুতিনের ঘোষণা দেওয়ার পরদিনই এ অঞ্চলের শহর লিমানে ঢুকেছে ইউক্রেইনীয় বাহিনী। আর রুশ সেনারা প্রাণ বাঁচাতে সেখান থেকে পালিয়ে গেছে।
ইউক্রেইন বলছে, লিমানে অভিযান চালানোর সময় মোটামুটি পাঁচ হাজার রুশ সেনাকে ঘিরে ফেলেছিল তারা। তবে কতজন সেনা মারা গেছে বা ধরা পড়েছে সে হিসাব তাদের জানা নেই। কিইভের প্রতিরক্ষামন্ত্রণালয় এক টুইটে বলেছে, লিমানে মোতায়েন প্রায় সব রুশ সেনাই হয় মারা পড়েছে নয়ত ধরা পড়েছে।