Saturday , July 27 2024
Breaking News

যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পেতে ১৫ লাখ টাকায় চুক্তি, একাধিক দেশের জাল সিল

নিজস্ব প্রতিনিধি: চক্রের সদস্য সংখ্যা ডজনখানেক। সবার ছিল আলাদা আলাদা কাজ। যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত দেশে মানবপাচারে জড়িত সবাই। এজন্য তারা দালালদের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে যেতে আগ্রহীদের সঙ্গে চুক্তি করতেন। দেশভেদে টাকার পরিমাণ কম-বেশি হতো। এক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ১০ লাখ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১৫ লাখ টাকায় হতো চুক্তি। আগ্রহীদের কোনো দেশে ভ্রমণ করার অভিজ্ঞতা না থাকলেও সমস্যা হতো না। কারণ চুক্তির পর বিভিন্ন দেশের জাল সিল তৈরি করে পাসপোর্টে লাগিয়ে দেওয়া হতো।

পাশাপাশি পাসপোর্টে বিভিন্ন দেশের ইমিগ্রেশনের ইন ও আউট সিলও থাকতো। পরে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পেতে আবেদন করা হতো মার্কিন দূতাবাসে। সহজে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পেতে থাইল্যান্ড, চীন, নেপাল, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও ভিয়েতনামের জাল সিল তৈরি করে ভিসায় লাগানো হতো। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পাওয়ার আশায় একাধিক দেশের জাল সিল পাসপোর্টে লাগাতো প্রতারক চক্র।

তবে দূতাবাস যাচাই-বাছাই করে প্রতারণার বিষয়টি ধরতে পারে। ফলে আবেদন রিজেক্ট (বাতিল) হয়ে যায়। তবে তার আগেই চক্রের সদস্যরা ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয় মোটা অঙ্কের টাকা। এভাবে দীর্ঘদিন ধরে মানুষকে যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত দেশে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রের সদস্যরা।

বুধবার (১২ এপ্রিল) এ তথ্য জানিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ (উত্তর)। এর আগে রাজধানীর গুলশান থানায় ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের করা এক মামলায় জালিয়াতি চক্রের কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন, ফেরদৌস আহমেদ (৩৯), জাহিদুল ইসলাম (৩২), মোহাম্মদ ফরিদ আলী (৫০) ও মো. আক্তার হোসেন (৪২)। সিলেট, শরীয়তপুর ও ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারদের মধ্যে ফেরদৌস নবম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করে দর্জির কাজ করতেন। এছাড়া জাহিদুল বিবিএ, ফরিদ ৮ম শ্রেণি ও আক্তার এলএলবি পাস করে বিভিন্ন ব্যবসায় জড়িত ছিলেন।

তদন্ত সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, ফেরদৌস আহম্মেদ গত বছরের ৬ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ভিসার জন্য ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসে পাসপোর্ট জমা দেন। তার পাসপোর্ট পর্যালোচনা করে দেখা যায়, পাসপোর্টে নেপাল, মালদ্বীপ, ইন্দোনেশিয়া ও ব্রুনাইয়ে ভ্রমণের যে ভিসার সিলগুলো দেওয়া হয়েছে সেগুলো জাল।

ফেরদৌস একটি এজেন্সির মাধ্যমে তার পাসপোর্টে ভিসার প্রসেসিং করেছিলেন। একইভাবে জাহিদুল ইসলাম গত বছরের ২৯ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ভিসার জন্য আবেদন করে পাসপোর্ট জমা দেন। তার পাসপোর্ট পর্যালোচনা করে দেখা যায়, পাসপোর্টে থাকা থাইল্যান্ড ও চীনের যে ভিসার সিল দেওয়া আছে সেগুলো জাল।

একইভাবে ৫ ডিসেম্বর মোহাম্মদ ফরিদ আলীর জমা দেওয়া পাসপোর্টে দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, সিঙ্গাপুর, মালেয়শিয়া, ভিয়েতনামের ভিসার জাল সিল রয়েছে। তিনিও একটি এজেন্সি থেকে তার ভিসা প্রসেসিং করেন।

তদন্ত কর্মকর্তাদের মতে,তারা ৩ জনই প্রতারণার মাধ্যমে ভিসা নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে অভিবাসনের পাঁয়তারা করছিলেন। জালিয়াতির বিষয়টি বুঝতে পেরে মামলা করে মার্কিন দূতাবাস।

সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন,আসামিরা অবৈধভাবে মার্কিন ভিসা নেয়ার জন্য ট্রাভেলস এজেন্সির মাধ্যমে যে পাঁয়তারা করছিল সেটি তারা স্বীকার করেছে।

ডিবি সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের (উত্তর) অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) জুনায়েদ আলম সরকার বলেন, গ্রেফতার ফেরদৌস, জাহিদুল ও ফরিদ আলী আক্তার ট্রাভেলসের আক্তার হোসেন ও আরেক ব্যক্তির সঙ্গে পরস্পর যোগসাজশ করে বিভিন্ন দেশের জাল ভিসা ও সিল নিজেরাই তৈরি করে পাসপোর্টে ব্যবহার করতেন। চক্রটি গত ৫ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পাওয়ার জন্য জালিয়াতি করে আসছিল। তাদের প্রতারণার শিকার হয়েছেন অনেকেই। দূতাবাস ভিসার জন্য আবেদন করা বিভিন্ন ব্যক্তির পাসপোর্ট যাচাই বাছাই করে তাদের প্রতারণার বিষয়টি ধরতে পারে।

তিনি বলেন, এ চক্রের আরও অনেক সদস্যকে গ্রেফতারে অভিযান চলছে। তারা গা ঢাকা দিয়ে আছেন। পাসপোর্টে জাল ভিসা বা জাল সিল ব্যবহার করা এক ধরনের অপরাধ। এ ছাড়া শুধুমাত্র বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করলেই যুক্তরাষ্ট্রের ভিসাপ্রাপ্তি নিশ্চিত হয় না। ভিসার জন্য সব সঠিক তথ্য উপস্থাপন করতে হয়।

এছাড়াও

“অভিভাবকহীন সন্তানদের থেকে রাষ্ট্রও যেন মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে”

সাঈদুর রহমান রিমন: বৈষম্যের মাধ্যমে সৃষ্ট বঞ্চনা, নিপীড়নের ‘কোটা বিরোধী’ যৌক্তিক ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে নেমেছে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *