Sunday , October 6 2024

সিলেটের চাঞ্চল্যকর হত্যার প্রধান আসামি গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিনিধি :

পৈত্রিক সম্পত্তি নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে পূর্ব থেকেই বিরোধ চলে আসছিল। এছাড়া সিলেটের জৈন্তাপুরে দরবস্ত বাজারে দুই পরিবারের সদস্যদের মধ্যে দোকান ও বাজারের আধিপত্য নিয়ে দলাদলি ছিল। এর জের ধরে গত দুই মাস আগে শমছু উদ্দিনের ভাই আমিনুদ্দিন ও আসামি তাজ উদ্দীনের মধ্যে বাজারের একটি গাছের ডাল কাটা নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শমছু উদ্দিনকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এই চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার প্রধান আসামি তাজউদ্দীনসহ মোট পাঁচজনকে আটক করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব-৩)।

রোববার (২ এপ্রিল) রাতে রাজধানীর মৎস্য ভবন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।

আটকরা হলেন: মামলার প্রধান আসামি তাজ উদ্দীন (৪৪), নাসির উদ্দিন (৩৬), রহিম উদ্দিন (৪০), বশির উদ্দিন (৩৮), এদের সবার বাবা মৃত-হাজী আব্দুল হক ও আহবাব হোসেন তানভীর (২৫)।

সোমবার (৩ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।

আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে তিনি জানান, আসামিদের মধ্যে তাজ উদ্দীন, নাসির, রহিম ও বশির এই ৪ জন আপন ভাই। অপর আসামি তানভীর তাদের ভাতিজা। ভিকটিম শমছু উদ্দিন তাদেরই আপন চাচাতো ভাই। তারা সকলে একই গ্রামে পাশাপাশি বাড়িতে বসবাস করত। পৈত্রিক সম্পত্তি নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে পূর্ব থেকেই বিরোধ চলে আসছিল। এছাড়াও দরবস্ত বাজারে দুই পরিবারের সদস্যদের মধ্যে দোকান ও বাজারের আধিপত্য নিয়ে দলাদলি ছিল। এরই জের ধরে গত দুই মাস আগে ভিকটিম শমছু উদ্দিনের ভাই আমিনুদ্দিন এবং ধৃত আসামি তাজ উদ্দীনের মধ্যে বাজারের একটি গাছের ডাল কাটা নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। দরবস্ত বাজারের মসজিদের পাশে আমিন উদ্দিনের একটি দোকান রয়েছে। আমিনুদ্দিন দোকানের সুবিধার্থে পার্শ্ববর্তী বটগাছটির কিছু ডালপালা ছেটে দিলে তাজ উদ্দীন তাকে বাধা দেয়। কিন্তু তাজ উদ্দীনের বাধা না মেনে গাছের ডাল কাটায় সে আমিনুদ্দিনসহ তার ভাই শমছু এবং উপস্থিত অন্যান্যদের উচিত শিক্ষা দিবে বলে হুমকি দেয়।

র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক বলেন, ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে টানা দুই মাস যাবত দুই পরিবারের মধ্যে কয়েক দফা হুমকি ধামকি এবং একাধিকবার বিচার সালিশ বসলেও বিরোধের সমাধান হয় না। উল্টো উত্তেজনা বাড়তে থাকে। এরই জের ধরে গত ২৪ মার্চ রাতে দরবস্ত বাজারের একটি চায়ের দোকানে ভিকটিম শমছুর ভাই শামীম এবং আসামিদের বড় ভাই কামালের মধ্যে জায়গা জমি নিয়ে আবারো কথা কাটাকাটির সৃষ্টি হলে উভয়পক্ষ তাদের পরিবারের সদস্যদের খবর দিয়ে নিয়ে আসে। সেখানে দুই পক্ষের মধ্যে একটি বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে স্থানীয় লোকজন তাদেরকে থামানোর চেষ্টা করে। কিছু সময়ের জন্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকে। এরপর ২৪ মার্চ দিবাগত রাত সাড়ে ১২ টার সময় তাজ উদ্দীন, কামাল উদ্দীন, নাসির, রহিম, বশির, তানভীর এবং আরিফ মিলে বাশ ও কাঠের লাঠি, কাঠের রুল, লোহার রড ও দেশীয় ধারালো অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে আমিনুদ্দিন, শমছুদ্দিন ও অন্যান্যদের উচিত শিক্ষা দেয়ার জন্য তাদের উপর হামলা করে। হামলায় উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলতে থাকে। একপর্যায়ে আসামি তাজ উদ্দীন তার হাতে থাকা ধারালো দা দিয়ে শমছু উদ্দিনকে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথার ডান দিকে ও মাথার পিছনে কোপ মেরে গুরুতর রক্তাক্ত কাটা জখম করে। সাথে সাথে আসামি রহিম তার হাতে থাকা কাঠের লাঠি দিয়ে পুনঃরায় শমছু উদ্দিনের মাথার মাঝখানে বারি মেরে জখম করে। এর ফলে শমছু উদ্দিন গুরুতর আহত ও রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ে থাকে। এদিকে আসামি নাসির তার হাতে থাকা কাঠের রুইল দিয়ে ভিকটিমের ভাই শামীমকে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথার পিছনে বারি দিয়ে গুরুতর আহত করে। আসামি বশির তার হাতে থাকা ধারালো দা দিয়ে ভিকটিমের ভাই ফয়সালের হাতে কোপ মেরে একটি আঙ্গুলে গুরুতর জখম করে। আসামি তানভীর তার হাতে থাকা লোহার রড দিয়ে ভিকটিমের ভাই মাসুকের পিঠে বারি মারে। এভাবে এলোপাতাড়ি মারামারির পর তাজ উদ্দিন তার ভাইদের নিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে দৌড়ে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে বাজারে উপস্থিত স্থানীয় লোকজন আহত ব্যক্তিদেরকে উদ্ধার করে জৈন্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের অবস্থা আশংকাজনক দেখে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজে রেফার্ড করেন। সেখানে চিকিৎসারত অবস্থায় ভিকটিম শমছু উদ্দিনের অবস্থার অবনতি হলে তাকে ২৮ মার্চ তারিখ ঢাকার নিউরো সায়েন্স কলেজ ও হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। সেখানে একদিন চিকিৎসার পর ২৯ মার্চ পুনঃরায় তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে পাঠালে ৩১ মার্চ চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ৮ টায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণ করেন।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন বলেন, এই ঘটনায় ২০২৩ সালের ২৫ মার্চ সিলেট জেলাধীন জৈন্তাপুর মডেল থানার মামলা হয়। আসামিরা মামলার পর থেকে ভিকটিমের পরিবারকে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদান করে আসছে। পরবর্তীতে ভিকটিম শমছু উদ্দিন মারা গেলে বিজ্ঞ আদালত ৩০২ ধারা সংযোজনের আদেশ দেয়ার ২৪ ঘন্টার মধ্যে এই হত্যাকান্ডের মূলহোতাসহ ৫ জনকে আটক করা হয়। মামলার আরও ২ আসমি পলাতক আছে। বাকী আসামি দের আটক করতে আমাদের একাধিক টিম কাজ করছে।

এছাড়াও

মুক্তি পেয়েই সমন্বয়ক সারজিসের স্ট্যাটাস

মুক্ত হয়ে সামাজিকমাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম। বৃহস্পতিবার (১ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *