শেষবার্তা ডেস্ক: শিশুদের ঠান্ডা লাগার সমস্যা দেখা দেয় শীতের শুরুতে কিংবা মৌসুম পরিবর্তনের সময়। এসময় ঠান্ডা লেগে নাক বন্ধ হওয়া, নাক দিয়ে পানি পড়া,সর্দি জমে থাকার মতো সমস্যাগুলো হয় নিত্যসঙ্গী। শিশুর এমন স্বাস্থ্য সমস্যায় অনেকেই প্রেসক্রিপশন ছাড়াই নানা ধরনের নাকের ড্রপ ও স্প্রে ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু এগুলো ব্যবহার করা কি ভালো না ক্ষতিকর?
পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াজনিত সমস্যা
নাকের ড্রপ ব্যবহারের কারণে শিশুর অত্যধিক ঝিমুনি, পেটের সমস্যা, দ্রুত হৃৎস্পন্দন, খিঁচুনি, যন্ত্রণা ভাব, অস্বস্তি ভাব বা নাকের ভেতর শুষ্ক ভাব, মাথাব্যথা ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে। দীর্ঘ সময় ধরে এমন ওষুধ ব্যবহারের ফলে ভ্যাসোডাইলেটেশনের (ওষুধ প্রভাবিত নাসারন্ধ্রের শ্লেষ্মা ঝিল্লির প্রদাহ) পুনরাবৃত্তি ও নিদ্রা ভাব হতে পারে।
নাকের ড্রপগুলো দেখতে একইরকম হলেও শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে ব্যবহারের আলাদা মাত্রা রয়েছে। অনেক সময়ই অসাবধানতায় বড়দের ড্রপ ছোটদের দিয়ে দেওয়া হয়। ভুল মাত্রার কারণে দেখা দেয় অন্য জটিলতা। শিশুদের নাকে ব্যবহারযোগ্য কিছু ওষুধ সম্পর্কে জানুন-
ন্যাজেল ড্রপস
একধরনের আইসোটোনিক দ্রবণ, যা নাকের ভেতরে অবস্থিত শক্ত মিউকাস পরিষ্কার করার জন্য ব্যবহৃত হয়। এর প্রতি মিলিতে আছে সোডিয়াম ক্লোরাইড বিপি ৯ মিলিগ্রাম। অ্যালার্জিক রাইনাইটিস, সাইনাস ইনফেকশন এবং বিভিন্ন ধরনের ঠান্ডাজনিত সমস্যায় নাক পরিষ্কারের জন্য এই ড্রপস ব্যবহার করা হয়।
অক্সিমেটাজোলিন ন্যাজেল ড্রপস
এই ড্রপস ব্যবহৃত হয় অ্যালার্জি ও ইনফেকশনজনিত নাকের শ্লেষ্মা ঝিল্লির প্রদাহ, সাইনোসাইটিস, সাধারণ সর্দি-কাশির জন্য। দিনে দুবার নাকের ভেতর এর দুই থেকে তিন ফোঁটা করে প্রয়োগ করতে হবে। মাথা নিচের দিকে রেখে প্রথমে নাকের এক ছিদ্রের ভেতর, এরপর অপর ছিদ্রের ভেতর দিতে হবে। এতে রোগীর ওষুধ গিলে ফেলার আশঙ্কা কমে যায়। তিন থেকে পাঁচ দিনের বেশি এই ড্রপস ব্যবহার করা উচিত নয়। প্রয়োজনে কয়েকদিন বেশি হলেও কোনো অবস্থাতেই দুই সপ্তাহের বেশি সময় এই চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া ঠিক হবে না।
নেজ্যাল স্প্রে
শিশুর অ্যালার্জির সমস্যা দেখা দিলে, সেখান থেকে দেখা দেয় হাঁচি ও নাক বন্ধ হয়ে যাওয়ার সমস্যা। এই পরিস্থিতিতে দ্রুত আরাম পেতে অনেকে নেজ্যাল স্প্রে ব্যবহার করেন। ভেপার বা বাষ্প নিলেও বন্ধ নাক খুলে যায়। কিন্তু তাতে সময় লাগে বেশি।
তবে স্প্রে বারবার ব্যবহার করলে বারবার শ্বাস নেওয়ার কারণে ভেতরের ত্বক শুষ্ক হয়ে রক্ত বের হওয়া, মাথাব্যথা ও নাক ফুলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই দীর্ঘ সময় ধরে এই স্প্রের ব্যবহার না করাই ভালো। এতে আসক্তি তৈরি হয়, যা দীর্ঘ মেয়াদে নাক ও শরীরের ক্ষতি করে।
অভিভাবকরা জেনে রাখুন
নবজাতকের নাসারন্ধ্র ছোট ও সোজা হয়। তাই সামান্যতেই জ্যাম লাগে। সচরাচর এটি নিজে নিজে ঠিকও হয়ে যায়। শিশুর বয়স ছয় মাস পার হলে নাসারন্ধ্রের আকার-আয়তন প্রায় দুই গুণ বৃদ্ধি পায়। তখন সর্দিতে নাক বন্ধ হয়ে যাওয়ার হারও কমে আসে। তাই নবজাতক ও ছোট্ট শিশুর এ ধরনের সমস্যায় কোনো ওষুধ বা চিকিৎসার চেয়ে সাধারণ যত্ন-আত্তির দিকেই জোর দেওয়া ভালো।