শেষবার্তা ডেস্ক : হবিগঞ্জ জেলার লাখাই এলাকায় চাঞ্চল্যকর রুকন উদ্দিনকে নৃশংসভাবে হত্যাকান্ডের মূল পরিকল্পনাকারী সাজু মিয়াসহ হত্যাকান্ডে জড়িত ১০ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-১০)।
মঙ্গলবার (১৪ মে) সকালে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তাররা হলেন: হবিগঞ্জ জেলার লাখাই এলাকায় চাঞ্চল্যকর রুকন উদ্দিনকে নৃশংসভাবে হত্যাকান্ডের অন্যতম মূল পরিকল্পনাকারী সাজু মিয়া (৫০), ছাদির মিয়া (৬০), আঃ রহিম (৪৮), মফিজ মিয়া (৪২), সিজান মিয়া (৪২), শুকুর মিয়া (৩৯), সালাহ উদ্দিন (৩০), আকাশ মিয়া (২৮), হাদিছ মিয়া (২২), ও নিজাম উদ্দিন (৪৫)।
র্যাব জানায়, হবিগঞ্জ জেলার লাখাই থানাধীন স্বজনগ্রাম এলাকায় বসবাসকারী সাজু মিয়া (৫০) তার নেতৃত্বে ৪০-৫০ জন লোক নিয়ে একটি লাঠিয়াল বাহিনী গঠন করে। উক্ত লাঠিয়াল বাহিনী সংঘবদ্ধভাবে লাখাই থানাধীন বিভিন্ন এলাকায় দাঙ্গাবাজি, মারামারি, ভূমি দখল ও প্রভাব বিস্তারসহ বিভিন্ন অপরাধ করে আসছিল। তাদের এহেন কার্যকলাপে কেউ বাঁধা প্রদান করলে তারা উক্ত বাঁধা প্রদানকারীকে মারধর ও প্রাণনাশের হুমকি প্রদানসহ বিভিন্ন প্রকার ভয়-ভীতি প্রদর্শন করত। ৩১ মার্চ সকাল ১০ টার দিকে লাঠিয়াল বাহিনীর অন্যতম নেতা সাজু মিয়া (৫০)সহ আরো ৩-৪ জন স্বজনগ্রাম এলাকার একটি রাস্তার পাশ হতে মাটি কেটে তাদের নিজের জমিতে ভরাট করছিল। একই এলাকায় বসবাসকারী ভিকটিম রুকন উদ্দিন ও তার ভাই আশরাফ উদ্দিন বিষয়টি দেখে সাজুকে বলে যে, এভাবে রাস্তা থেকে মাটি কাটলে রাস্তার ক্ষতি হবে। রুকন উদ্দিনের উক্ত কথায় সাজু মিয়া ও মফিজ মিয়াসহ ৩-৪ জন ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের হাতে থাকা কোদাল নিয়ে রুকন উদ্দিন ও আশরাফ উদ্দিনের উপর আক্রমন করার জন্য উদ্ব্যত হলে তাদের শোর-চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে সাজুদেরকে নিবৃত করে। অতঃপর উক্ত গ্রামের মুরুব্বিরা এসে তাদের বিষয়টি মীমাংসা করে দেয়।
র্যাব আরও জানায়,পরবর্তীতে সাজু ও মফিজ তাদের লাঠিয়াল বাহিনীর অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে ভিকটিম রুকনকে হত্যার পরিকল্পনা করে। ৩১ মার্চ বিকালে ৪ টায় সাজু, মফিজ ও তাদের লাঠিয়াল বাহিনীর ৩০-৪০ জন সদস্য দেশীয় অস্ত্র (রাম দা, ফিকল, কুচারশলা, লোহার রড ও লাঠি) নিয়ে রুকন উদ্দিনের বাসায় সামনে দাড়িয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। গালিগালাজ করার একপর্যায়ে ভিকটিম রুকন উদ্দিন বাসা থেকে বেরিয়ে আসলে সাজু ও মফিজসহ আসামিরা তাদের কাছে থাকা রাম দা, ফিকল, কুচারশলা, লোহার রড ও লাঠি দিয়ে রুকন উদ্দিনকে এলোপাথাড়ি আঘাত করে তার চোখ, মাথা, কোমর ও হাতসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর রক্তাক্ত জখম করে উল্লাস করতে করতে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। পরে রুকনের পরিবারের লোকজন স্থানীয় লোকজনদের সহযোগীতায় তাকে গুরুতর রক্তাক্ত আহত অবস্থায় লাখাই উপজেলা স্বাস্থ্যকপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রুকনের অবস্থা গুরুতর দেখে তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করেন। পরে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় আনা হয়। পরবর্তীতে রুকন ধানমন্ডির একটি হাসপাতালের আই.সি.ইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৫ এপ্রিল আনুমানিক মাঝ৷ রাত ১টা ১০ মিনিটে রুকন মৃত্যুবরণ করেন। ওই হত্যাকান্ডের ঘটনায় মৃত রুকন উদ্দিনের ছেলে আলমগীর মিয়া বাদি হয়ে হবিগঞ্জ জেলার লাখাই থানায় সাজু, সাদির, মফিজসহ ২০ জন অজ্ঞাতনামা আরো ১৫-২০ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
র্যাব-১০ এর সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) সহকারী পুলিশ সুপার এম.জে. সোহেল বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ও তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৭ টার দিকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় অভিযান চালনো হয়। অভিযানে হবিগঞ্জ জেলার লাখাই এলাকায় চাঞ্চল্যকর রুকন উদ্দিনকে হত্যাকান্ডের অন্যতম মূল পরিকল্পনাকারী সাজু মিয়াসহ হত্যাকান্ডে সরাসরি জড়িত পলাতক ১০ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তিনি আরও জানান, আসামিরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওই হত্যাকান্ডে তাদের সরাসরি জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। আসামিদেরকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তরের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা।