শেষবার্তা ডেস্ক : রাজধানীর আশুলিয়া থানার শিমুলিয়া এলাকার বংশাই নদী থেকে ভাসমান অজ্ঞাত নারীর লাশ উদ্ধারের পরে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ওআইভিএস (অন-সাইট আইডেন্টিফিকেশন অ্যান্ড ভেরিফিকেশন সিস্টেম) ব্যবহার করে ভুক্তভোগী’র ওই নারীর নাম ও পরিচয় সনাক্ত করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ান (র্যাব-৪)।
ভুক্তভুগি রুবিনা নরসিংদী জেলার পলাশ এলাকায় একটি গার্মেন্টসে চাকুরী করতেন। বিগত ৬ মাস আগে আসামি এনামুলের সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিকটিমের পরিচয় হয়। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয়। এনামুল প্রায়ই ভিকটিমকে অধিক বেতনে অন্যত্র চাকুরী দেয়ার মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে আশুলিয়ায় আসতে বলতো। পরবর্তীতে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করে আসামি এনামুল সানা। মরদেহ গুম করতে বংশাই নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছিল। হত্যাকাণ্ড ও লাশ ঘুমে জড়িত থাকায় দুই জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
সোমবার (১১ ডিসেম্বর) রাতে আশুলিয়া থানার টেংগুরী এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তাররা হলেন, প্রধান আসামি এনামুল সানা (২৭), ও তার সহযোগী সোহাগ রানা (২৮)।
মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, গত ৯ ডিসেম্বর বিকালে ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানার শিমুলিয়া ইউনিয়নের বিক্রমপুর এলাকায় বংশাই নদীতে একটি অজ্ঞাতনামা নারীর মৃতদেহ ভাসতে দেখে স্থানীয় লোকজন নৌ-পুলিশ ও র্যাবকে বিষয়টি জানায়। পরে র্যাব-৪ এর গোয়েন্দা দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ওআইভিএস (অন-সাইট আইডেন্টিফিকেশন অ্যান্ড ভেরিফিকেশন সিস্টেম) ব্যবহার করে নদীতে ভাসমান অজ্ঞাত নারীর মৃতদেহটির নাম ও পরিচয় সনাক্ত করতে সক্ষম হয়। ভাসমান এই মৃতদেহটি দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর থানার রঘুনাথপুর দোলাপাড়া গ্রামের আব্দুল ওয়ারেছ এর মেয়ে রুবিনা খাতুনের বলে নিশ্চিত হয়। পরবর্তীতে র্যাব-৪ ভিকটিমের পরিবারের সদস্যদের সংবাদ দিলে তারা রাজধানীর আশুলিয়া এসে ভিকটিমের ভাই আশুলিয়া থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করেন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে খন্দকার আল মঈন বলেন, ভিকটিম রুবিনা খাতুন (২৪) নরসিংদী জেলার পলাশ এলাকায় একটি গার্মেন্টসে চাকুরী করতেন। বিগত ৬ মাস আগে গ্রেফতারকৃত আসামি এনামুলের সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিকটিমের পরিচয় হয় এবং এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয়। গ্রেপ্তার এনামুল পরিবারসহ আশুলিয়া ভাড়া বাসায় বসবাস করতো এবং আগে গার্মেন্টসে সুপারভাইজারের চাকুরি করলেও বর্তমানে সে ভাড়ায় নিজের মোটরসাইকেল চালাতো। এনামুল প্রায়ই ভিকটিমকে অধিক বেতনে অন্যত্র চাকুরী দেয়ার মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে আশুলিয়ায় আসতে বলতো। গত ৩ ডিসেম্বর এনামুলের স্ত্রী ও সন্তান গ্রামের বাড়ী খুলনার পাইকগাছায় চলে যায়। পরে এনামুল ভিকটিম রুবিনা খাতুনকে সুযোগ বুঝে তার আশুলিয়া ভাড়া বাসায় নিয়ে আসে এবং বিভিন্ন মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে ৮ডিসেম্বর পর্যন্ত তার বাসায় রাখে। এ সময় ভিকটিম এনামুলকে বার-বার বিবাহের কথা বললে সে বিবাহ করতে অস্বীকৃতি জানালে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে মনোমালিন্য ও ঝগড়া হয়। পরে ভিকটিম রুবিনা এনামুলকে আবারও বিবাহের কথা বলায় সে বিবাহ করতে অস্বীকৃতি জানায় এবং তাদের মধ্যে বাক-বিতন্ডার সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে এনামুল ক্ষিপ্ত হয়ে ভিকটিমের মুখে বালিশ চাপা দিয়ে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে এবং প্রমান ঢাকতে ভিকটিমের হাতে লেখা এনামুল নামটি মেহেদী দিয়ে ঢেকে দেয়।
তিনি বলেন, আসামিরা জানায় ভিকটিম রুবিনাকে হত্যার পর এনামুল কিভাবে ঘটনা ধামাচাপা দিবে সে বিষয়ে এনামুল তার দুঃসম্পর্কের আত্মীয় ও ঘনিষ্ঠ বন্ধু সোহাগকে মোবাইল ফোনে বিষয়টি জানিয়ে তার বাসায় আসতে বলে। পরে সোহাগ এনামুলের বাসায় আসে এবং ভিকটিম রুবিনার লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে নদীতে ফেলে দেয়ার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ি এনামুল ও সোহাগ রাত ৩টার দিকে রুবিনার মৃতদেহটি চাদর দিয়ে পেচিয়ে বাসার নিচে নামিয়ে আনে এবং মোটরসাইকেলের মাঝখানে বসিয়ে আনুমানিক ৫ কি. মি. দুরত্বে বংশাই নদীর উপর রাঙ্গামাটি ব্রীজ থেকে মৃতদেহটি নদীতে ফেলে দেয়। পরে তারা নিজ নিজ বাসায় গিয়ে স্বাভাবিক জীবন যাপন শুরু করে। তাদের মধ্যে এই বিশ্বাস জন্মায় যে, যেহেতু তারা গোপনে লাশটি নদীতে ফেলে দিতে সক্ষম হয়েছে এবং ভিকটিমের লাশটি খুঁজে পাওয়া গেলেও তার হত্যাকারীকে সনাক্ত করতে পারবে না। সুতরাং তারা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেপ্তার এড়াতে সক্ষম হবে। কিন্তু র্যাব প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে তাদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।
আসামিদের পরিচয়ের বিষয় র্যাব জানায়: আসামি এনামুল গত ৬ বছর আগে খুলনা হতে ঢাকায় এসে আশুলিয়ায় একটি ভাড়া বাসায় পরিবারসহ বসবাস করে আসছিল। সে গামের্ন্টসের সুপারভাইজারের চাকুরী করতো। বর্তমানে সে ভাড়ায় নিজের মোটরসাইকেল চালাতো। আনুমানিক ৭/৮ মাস আগে নারী কেন্দ্রিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকাবাসী তাকে আশুলিয়ার আগের বাসা হতে বিতাড়িত করে। এছাড়াও সে একাধিক নারীঘটিত বিষয়ে লিপ্ত ছিল বলে জানা যায়। তার বিরুদ্ধে খুলনার পাইকগাছা থানায় শিশু অপহরণ, চুরি ও মারামারি সংক্রান্ত একাধিক মামলা রয়েছে। সহযোগি সোহাগ গত ২ বছর ধরে ঢাকায় অবস্থান করছে। সে পেশায় একজন বাসের হেলপার। আসামি এনামুলের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হওয়ায় তার যাবতীয় অপকর্মের অন্যতম সহযোগী হিসেবে পাশে থাকত। আগে ঢাকার ধামরাই থানায় মাদক মামলায় ১ মাস কারাভোগ করেছে বলে জানায় র্যাব।