শেষবার্তা ডেস্ক : পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, আমাদের নদী রক্ষার জন্য নদীখেকো, বালুখেকো, নদী দখলকারী এদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা দরকার। আর যে সমস্ত শিল্পের মালিকরা নদীতে রঙিন পানি ফেলে এরা সমাজের শত্রু। এদের বিরুদ্ধেও প্রতিরোধ গড়ে তোলা দরকার।
বৃহস্পতিবার (২৩ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে নোঙর ট্রাস্ট আয়োজিত ২৩ মে, ‘জাতীয় নদী দিবস’ ঘোষণার দাবিতে ‘ঢাকা নদী সম্মেলন’ প্রস্তুতি সভা ২০২৪ তে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আমাদের দেশের মানুষ এখন উন্নয়ন মানেই বুঝে রাস্তা, ব্রীজ ও বিল্ডিং বানানো। এটাকেই মানুষ উন্নয়ন মনে করে। এই উন্নয়নের সাথে আমি দ্বিমত পোষণ করি। রাস্তা বানাতে গিয়ে যেটা হচ্ছে খাল- বিল -নদী-নালার ওপরে ব্রীজ বানানো হচ্ছে, কৃষি জমি নষ্ট হচ্ছে। আমরা যদি শুরু থেকে নদীর নাব্যতা রক্ষা করে পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে ব্যবহার করতাম তাহলে কিন্তু আজকে নদীর এই অবস্থা দাঁড়াতো না।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমি ছোটবেলায় যে নদীর পাড়ে খেলা করতাম সেই নদী আর এখন নেই, বালুচরও নেই। কারন নদী শুকিয়ে গেছে। আর এর পেছনের কারণ হচ্ছে নদীতে বিভিন্ন রাবার ড্যাম তৈরি হয়েছে, তাই নদীর উজানে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে। এটি সারা দেশের চিত্র। আর শহর অঞ্চলের যে নদী সেগুলো ক্ষমতাসীনরা দখল করেছে। এখন নদী শুকানোর পাশাপাশি এখন আবার সরু হয়ে যাচ্ছে।
নগরায়নের প্রভাব পরিবেশে পড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, গত ৫০ বছরে মানুষ ৩০০ কোটি থেকে ৮০০ কোটিতে গিয়ে দাড়িয়েছে। প্রায় তিনগুনের কাছাকাছি। মানুষ বাড়ছে, আগে মানুষ দুই এক বালতি পানি দিয়ে গোসল করত। কিন্তু এখন সেটা করে না। এখন আবার অনেকে বাথটাব ব্যবহার করে। তাই মানুষ বাড়ার কারনে পানির ব্যবহার বেড়েছে। আবার ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশনের কারনে, নগরায়নের কারনে পানির ব্যবহার বাড়ছে। এগুলোর একটা ইফেক্ট পরিবেশের উপর, নদীর উপরে পড়েছে। আবার কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করার জন্য আন্ডারগ্রাউন্ড ওয়াটার, সারফেস ওয়াটার এবং নদীর উপর প্রভাব পড়েছে। কিন্তু সেটাকে প্রোপারলি ম্যানেজ করার জন্য সবাইকে সমন্বয় করে যে রিজিওনাল কো-অপারেশন দরকার ছিল সেটা নাই।
হাছান মাহমুদ বলেন, আমি মনে করি সবার জন্য নদীর পানির ন্যায্যতা নিশ্চিত করার জন্য অর্থাৎ নদীর অববাহিকায় যারা বসবাস করে সবার জন্য সুসমভাবে পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করার জন্য আঞ্চলিক সহযোগিতা দরকার। আমাদের যৌথ নদী কমিশন আছে, কিন্তু আমি মনে করি এটাকে আরও ইফেক্টিভ করা দরকার। আর আমাদের একটি আঞ্চলিক সহযোগিতার ফোরাম গঠন করা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। কারন নদীর উৎপত্তি নেপালে, তারপর ভারতের উপর দিয়ে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে সাগরে গিয়ে মিশে। এখানে কয়েকটি দেশ জড়িত। অতএব সবাই মিলে যদি আমরা একটা আঞ্চলিক ব্যবস্থাপনা দাঁড় করাতে পারি তাহলে সবার জন্যই এটি সুবিধা হবে বলে আমি মনে করি।
ঢাকা ৪ আসনের সংসদ সদস্য, ড. মো. আওলাদ হোসেন বলেন, একসময় এই ঢাকার মধ্যেই অনেক পালতোলা নৌকা চলাচল করত। একসময় ঢাকা গড়েই উঠেছিল নদীকে কেন্দ্র রেখেই। নদী পথে পণ্য পরিবহন করা যায় কম খরচে। তাই এর গুরুত্ব অপরিসীম। তাই আমদের পরিবেশ ও সৌন্দর্য রক্ষায় নদীকে রক্ষা করতে হবে।
নোঙর ট্রাস্টের চেয়ারম্যান সুমন শামসের সভাপতিত্বে দৈনিক সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খান ও সংগঠনের অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।