রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের প্রচারণা শেষ হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) দিবাগত রাত ১২টায় প্রচারণার সময় শেষ হয়। প্রচারণার শেষ দিনে ভোটারদের কাছে পৌঁছাতে ব্যস্ত সময় পার করেছেন পদপ্রার্থীরা। উৎসবমুখর পরিবেশের মধ্যে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন নিয়ে আশার পাশাপাশি আশঙ্কার কথাও জানিয়েছেন কেউ কেউ।
মঙ্গলবার মধ্যরাত পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক হল, বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বিনোদপুর, কাজলা এলাকার চায়ের দোকান, মেস ও ছাত্রাবাসে প্রচারণা চালান প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা।
আচরণবিধি লঙ্ঘন এবং নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে অভিযোগ তুলেছে ছাত্রশিবির–সমর্থিত প্যানেল ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’। অন্যদিকে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকার ওপর আস্থা রাখার কথা বললেও শেষ পর্যন্ত তা কতটা বজায় থাকবে, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে ছাত্রদল–সমর্থিত প্যানেল ‘ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম’।
গতকাল মঙ্গলবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেটে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন উভয় দুই প্যানেলের ভিপি প্রার্থীরা।
প্রচারণার ক্ষেত্রে তারা বাধার শিকার হয়েছেন জানিয়ে সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোটের ভিপি প্রার্থী মোস্তাকুর রহমান অভিযোগ করেন, সোমবার বেগম খালেদা জিয়া হলে আমাদের একটি প্রজেকশন মিটিং ছিল; কিন্তু আমাদের খাবার, চেয়ার এমনকি প্রজেক্টরও হলে ঢুকতে দেয়া হয়নি। প্রশাসন এগুলো জব্দ করেছে বলে জানিয়েছে, যা হাস্যকর।
নির্বাচন কমিশনের সার্বিক কার্যক্রমে সন্তুষ্ট হলেও কয়েকজন কমিশনার এবং হল প্রাধ্যক্ষের আচরণে পক্ষপাতিত্বের ছাপ দেখা গেছে।
শিবির–সমর্থিত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছেন ছাত্রদল–সমর্থিত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী নূর উদ্দীন আবীর। তিনি বলেন, তারা (সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোটের প্রার্থীরা) বিভিন্ন হলে খাবার ও উপঢৌকন বিতরণ করছে, যা হাতেনাতে ধরা পড়েছে। এটি একটি প্রমাণিত অভিযোগ।
নির্বাচন কমিশনের ভূমিকার ওপর আস্থার কথা বললেও শেষ পর্যন্ত এটি কতটা বজায় থাকবে তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী। তিনি বলেন, এখন তারা সেই বিশ্বাসের মর্যাদা রাখবেন কি না, তা নিজেদের বিবেকের ওপর নির্ভর করছে।
একই বিষয়ে শিবির–সমর্থিত প্রার্থী মোস্তাকুর রহমান জাহিদ বলেন, আমরা এখনই চূড়ান্ত মন্তব্য করতে চাই না। নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা এবং তার পরবর্তী কয়েক দিনের পরিবেশ দেখেই বোঝা যাবে নির্বাচন কতটা সুষ্ঠু হয়েছে।
ছাত্রদলের এজিএস প্রার্থীকে সমর্থন দিয়ে সরে দাঁড়ান দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী:
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে ছাত্রদল মনোনীত ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম প্যানেলের সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদপ্রার্থী জাহিন বিশ্বাস এষাকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী। মঙ্গলবার আলাদা আলাদা সংবাদ সম্মেলন করে তারা এ সিদ্ধান্ত জানান তিনি।
সরে দাঁড়ানো প্রার্থীরা হলেন- মেরাজুল ইসলাম ও ফজলে রাব্বি। মেরাজুল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও ভূমি প্রশাসন বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। অন্যজন হলেন ফজলে রাব্বি। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রস্তুতি:
নির্বাচনী দিনের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। ক্যাম্পাসে সিনেট ভবনের পাশে সেন্ট্রাল মনিটরিং বক্স করা হয়েছে।এ ছাড়াও নির্বাচনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সোমবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে ১৭ অক্টোবর রাত ১২টা পর্যন্ত ক্যাম্পাসের আশেপাশের ২০০ গজের ভেতর সকল সভা, সমাবেশ ও অস্ত্র বহন নিষিদ্ধ করেছে পুলিশ।
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার আবু সুফিয়ানের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
উৎসবমুখর নির্বাচনের আশা উপাচার্যের:
সার্বিক বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব বলেন, রাকসু নির্বাচনের বিষয়ে কমিশন অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। ১৬ তারিখ নির্বাচনকে সামনে রেখে মোটামুটি সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। আমরা নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে ৩ স্তরের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে রাখবো। এর বাইরে গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করবে, প্রক্টোরিয়াল বডি কাজ করবে। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের সার্বিক সহায়তায় সবমিলিয়ে নির্বাচন উৎসবমুখর হবে বলে আশা রাখছি।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক এফ নজরুল ইসলাম বলেন, রাকসু নির্বাচন শিক্ষার্থীদের একটি নির্বাচন। নির্বাচনে শিক্ষার্থীদের এই ভোট কীভাবে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা যায় আমরা সেটিই দেখব। যেকোনো পরিস্থিতিতে আমরা আমরা আমাদের সর্বোচ্চ ধৈর্য দেখাবো। সুন্দর একটি নির্বাচনের জন্য আমাদের সকলের সহযোগিতার প্রয়োজন। সকলের সহযোগিতায় আশা করছি আমরা একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করতে পারব।
উল্লেখ্য, রাকসু নির্বাচনের আচরণবিধি অনুযায়ী নির্বাচনের ২৪ ঘণ্টা আগে প্রচারণা শেষ করতে হবে প্রার্থীদের। ফলে মঙ্গলবার রাত ১২টা পর্যন্ত নির্বাচনের জন্য প্রচার-প্রচারণা চালানো গেছে। এরপর ১৬ অক্টোবর সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলবে এবং একই দিনে ১২-১৫ ঘণ্টার মধ্যে ফলাফল প্রকাশ করা হবে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
দীর্ঘ ৩৫ বছর পরে বৃহস্পতিবারের এ নির্বাচনে ২৮ হাজার ৯০১ জন ভোটার রয়েছে। রাকসুর ২৩টি পদের বিপরীতে ২৪৭ জন এবং সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের ৫টি পদে ৫৮ জন প্রার্থী লড়াই করবেন। এর ভেতর সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ১৮ জন, সাধারণ সম্পাদক পদে (জিএস) ১৩ ও সহকারী সাধারণ সম্পাদক পদে ১৬ জন।