জাবি প্রতিনিধি:
ভর্তিচ্ছু পরীক্ষার্থীদের সুশৃঙ্খল ভাবে লাইনে দাড় করিয়ে নানা ধরনের নির্দেশনা দিচ্ছে নীলাভ– ধূসর শার্ট গাঢ় নীল রঙের প্যান্ট; গলায় সবুজ বর্ণের রুমাল পরিহিত একদল স্বেচ্ছাসেবক।
বলছি আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রোভার স্কাউটের কথা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) (২০২২-২৩) শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষায় নিয়ম শৃঙ্খলা রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে সংগঠনটি। লর্ড ব্যডেন পাওয়েলের হাতে ১৯০৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় সংগঠনটি যার মূলমন্ত্র হচ্ছে ‘সেবা’।
পরীক্ষার্থীদের সারিবদ্ধভাবে কেন্দ্রে প্রবেশ করানো, প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া, অসুস্থ শিক্ষার্থীদের সেবা প্রভৃতি সেবামূলক কাজ করে যাচ্ছে তারা। শারীরিক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের সিঁড়ি বেয়ে পরীক্ষার কক্ষে নিয়ে যেতে সাহায্য করতে দেখা যায় তাদের।
সারাবছরই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কার্যক্রমে নিয়ম শৃঙ্খলা রক্ষার কাজ করে থাকে রোভার স্কাউট। তবে এই সংগঠনটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে থাকে ভর্তি পরীক্ষা চলাকালীন। লাখ লাখ ভর্তিচ্ছু পরীক্ষার্থীরা একটি আসনের জন্য ছুটে আসে দূর-দূরান্ত থেকে। তাদের পরীক্ষা চলাকালীন যেন কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সে বিষয়ে সর্বদা সচেষ্ট থাকে রোভার স্কাউট । শৃঙ্খলা রক্ষা তাদের প্রধান কাজ হলেও পরীক্ষার্থীদের পথনির্দেশনা দেয়া, জরুরি প্রয়োজনে দেরিতে আসা পরীক্ষার্থীর দরকারী জিনিসপত্রের ব্যবস্থাও কখনো কখনো করে দেয় স্কাউটরা।
জাবি রোভার স্কাউটের সিনিয়র রোভার মেট (এসআরএম) খালেদ জুবায়ের শাবাব বলেন, ‘রোদ বৃষ্টি উপেক্ষা করে আমরা ভর্তি পরীক্ষার্থীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছি।এবার যেহেতু ছাত্র ও ছাত্রীদের আলাদা শিফটে পরীক্ষা হচ্ছে তাই আমরা প্রতিটি ভবনে নারী রোভার সদস্য রেখেছি বিশেষ করে নারীদের সহোযোগিতার জন্য। আমরা শুধু ভর্তি পরীক্ষা নয় অন্যান্য অনুষ্ঠানে ও শৃঙ্খলা রক্ষার কাজ করে থাকি। আমরা প্রসাশনের নিকট থেকে যথাযথা সহযোগিতা পেয়েছি।বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম শৃঙ্খলা রক্ষায় আমরা সদা প্রস্তুত।
ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসা মিতু আক্তার বলেন, ‘আমি তিনটি ইউনিটে পরীক্ষা দিতে এসেছি৷ কেন্দ্রে রোভার সদস্যরা আমাকে অনেক সহোযোগিতা করেছে। তাদেরকে ধন্যবাদ দিয়ে শেষ করা যাবে না।’
সেবা মূলক কাজের অনূভুতি সম্পর্কে স্কাউট সদস্য জুবাইর ইসলাম বলেন, ‘শৃঙ্খলার মূলমন্ত্র ধারণ করে আমরা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রোভার স্কাউট কাজ করি। ভোর সাড়ে ছয়টায় রিপোর্টিং এবং নির্দেশনা প্রণয়নের পর থেকে সন্ধ্যা ছয়টা অবধি একটানা পরীক্ষা কেন্দ্রের বাইরের এবং ভিতরের পরিবেশ যথাযথ রাখতে আমরা যথেষ্ট চেষ্টা করি। মানব শরীরে ক্লান্তি আসে তবে সেবাদানকারী মনে ক্লান্তি আসেনা। আমাদের মনের ইচ্ছা এবং আত্মবিশ্বাস আমাদের কে সেবা দিতে সাহায্য করে।’
এই ব্যাপারে রোভার স্কাউট লিডার (আরএসএল) সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কামরুজ্জামান বলেন , ‘এবছর ভর্তি পরীক্ষায় নিরাপত্তা নিশ্চিতের লক্ষ্যে চাহিদা অনুযায়ী নয়টি কেন্দ্রে আমাদের ৬০ জন রোভার স্কাউট সদস্য কাজ করে যাচ্ছে। আমি পাঁচ বছর যাবৎ বিশ্ববিদ্যালয়ের রোভারের সাথে যুক্ত আছি। আমাদের তিনটা ইউনিটে ১২০ জন সদস্য রয়েছে। আমি প্রথম আমাদের রোভারে নারী ইউনিট যুক্ত করেছি। রোভার সদস্যরা খুবই পরিশ্রমী। সেবাকে মূলমন্ত্র ধারন করে তারা কাজ করে। সেবার ব্রত নিয়ে এগিয়ে যাক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় রোভার স্কাউট শাখা এটাই আমার চাওয়া।’
প্রসঙ্গত, জাবিতে স্কাউট আন্দোলন মূলত শুরু হয় ১৯৮১ সালে। সেই থেকেই প্রতিবছর বিশ্ববিদ্যালয় দিবস, নারী দিবস, স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসসহ অন্যান্য দিবসগুলোতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন তারা।