মোঃ সোলায়মান :
জাতীয় ক্লাবের সামনে মঙ্গলবার (২১ মার্চ) দুপুরে আয়োজিত এক মানববন্ধনে আইএলও কনভেনশন ১৯০ অনুসমর্থনের দাবি জানিয়েছেন শ্রমিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের।
বক্তারা বলেন, আমরা যখনই লিঙ্গ বৈষম্য নিয়ে কথা বলি সেখানে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটের কারণে নারীর প্রতি বৈষম্য ও সহিংসতার বিষয়টি সামনে চলে আসে। নারী কেবলমাত্র একটি সত্তার নাম নয় বরং সে একটি চালিকা শক্তি, যাকে ছাড়া পৃথিবী স্তব্ধ-স্থবির। সভ্যতা বির্নিমাণে পুরুষের পাশাপাশি নারীও অবদান রাখিতেছেন। প্রত্যেক যুগেই নারী তার মেধা, বুদ্ধি, যোগ্যতা, শ্রম এবং মমতার সংমিশ্রনে গড়ে তুলেছে ভবিষ্যতের বুনিয়াদ, জন্ম দিয়েছে নতুন ইতিহাসের।
নারীর প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বেড়েছে শূণ্যতা তার চারিদিকে সমস্যা জড়িয়ে ধরেছে মাকড়সার জালের মত হাজারও প্রতিবন্ধকতা। আজ একবিংশ শতাব্দির আলোতে পৃথিবী অনেক এগিয়ে গেলেও নারীরা আজও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অসহায়, বড় বিপর্যস্থ। আধুনিক বিশ্বের নারী সমাজকে প্রতিটি পদক্ষেপে নানাবিধ সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতার স্বীকার হতে হচ্ছে। নারীরা পারিবারিক বৈষম্য, সামাজিক বৈষম্য, কর্মক্ষেত্রে বৈষম্য, মানসিক ও শারীরীকভাবে নির্যাতিত হচ্ছে, নারীর অবমূল্যায়ন, ইভটিজিং, গনধর্ষন, যৌন নির্যাতন, নিত্য দিনকার ঘটনায় পরিনত হয়েছে। সুনির্দিষ্ট আইন এবং বিচার প্রক্রিয়ার কারণে ভুক্তভোগীরা সুষ্ঠু বিচার পাচ্ছে না এবং এই অপরাধ দিন দিন বেড়েই চলছে।
নারীরা কর্মক্ষেত্রে যাওয়া-আসার বিষয় উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, নারীরা কর্মক্ষেত্রে এবং কর্মক্ষেত্রে যাওয়া আসার পথে, বিশেষ করে গনপরিবহনে, রাস্তাঘাটে ও তাদের আবাসস্থলে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন রকম যৌন হয়রানীর স্বীকার হচ্ছে, এমন দৃশ্যই উঠে এসেছে গবেষনায়। গত বছর বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার্স সলিডারিটি মাঠ পর্যায়ে ৪২০ জন পোশাক শ্রমিকের উপর গবেষনার মাধ্যমে দেখতে পায়।
যে গার্মেন্টস শ্রমিকদের মধ্যে ৮০% নারী শ্রমিক মৌখিক এবং শারীরীকভাবে যৌন হয়রানীর স্বীকার হচ্ছে তার মধ্যে ৮৩% শ্রমিক যৌন হয়রানীর ধরনগুলো সম্পর্কে সচেতন না শুধুমাত্র শারীরীকভাবে যৌন হয়রানীর স্বীকার হলেও অধিকাংশ কারখানায় কার্যকরী যৌন হয়রানী প্রতিরোধ কমিটি না থাকায় অভিযোগ জানাতে পারে না। যাহা তাদের কর্মপরিবেশে কাজ করার জন্য অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করে এবং অনেক শ্রমিক কারখানা থেকে চাকুরি ছেড়ে চলে যায়। গবেষনায় উঠে এসেছে ৮১% শ্রমিক যৌন হয়রানী প্রতিরোধ কমিটির গঠন এবং কার্যাবলি সম্পর্কে সচেতন না। আরো বৃহৎ পরিসরে উঠে এসেছে ৭৬% শ্রমিক কর্মক্ষেত্রে কোন কোন ভাবে যৌন হয়রানীর স্বীকার হয়েছেন। গবষেণার তথ্য অনুযায়ী কর্মক্ষেত্রে ১০০% শ্রমিক মৌখিকভাবে হয়রানীর স্বীকার হয়েছে। আরো বিভিন্ন সংস্থার গবেষনায় প্রায় একই চিত্র দেখতে পাওয়া যায়।
বক্তারা পরিশেষে বলেন, বিশ্বব্যাপী কর্মক্ষেত্রে সহিংসতা ও হয়রানী নিরসনে গত ২১ জুন ২০১৯ সালে আইএলও এর ১০৮তম অধিবেশনে একটি কনভেনশন গৃহিত হয় যে কনভেনশন ১৯০ নামে পরিচিত। বাংলাদেশ সরকার উক্ত কনভেশন অনুমোদন করে সুনির্দিষ্ট আইন ও বিধি গ্রহন করে সমস্যা সমাধানের জন্য কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারে।
মানব বন্ধনের শ্রমিকদের পক্ষ থেকে ৮ সুপারিশ বাস্তবায়নে সরকারের কাছে দাবি জানানো হয়। সুপারিশ গুলো হলো: কর্মক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী কার্যকরী যৌন হয়রানী প্রতিরোধ কমিটি গঠন করতে হবে। আইএলও কনভেনশন ১৯০ অনতিবিলম্বে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুস্বাক্ষর করতে হবে। অবিলম্বে কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা ও হয়রানী বন্ধে পূর্ণাঙ্গ আইন ও বিধি গ্রহন করতে হবে। কর্মক্ষেত্রে হয়রানী প্রতিরোধে রাত্রিকালিন নারী শ্রমিকদের কাজ করানোর ক্ষেত্রে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে।
সকল কর্মক্ষেত্রে এবং গনপরিবহনে নারী শ্রমিক তথা সকল নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।শ্রম আইনের সংস্কার এবং ব্যর্থতায় কঠোর শাস্তির বিধান নিশ্চিত করতে হবে। আসা যাওয়ার পথে নিরাপত্তা এবং সামাজিকভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। নারী নির্যাতন এবং হয়রানী সংক্রান্ত অভিযোগসমূহের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হবে।