শেষ বার্তা ডেস্ক :
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি)। পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে ১৯৭২ সালের এদিন তিনি সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে প্রত্যাবর্তন করেন। বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি পাকিস্তানের মিয়ানওয়ালি কারাগারে দীর্ঘ ৯ মাস কারাভোগের পর মুক্তি লাভ করেন। পরে তিনি পাকিস্তান থেকে লন্ডন যান। তারপর দিল্লি হয়ে ঢাকা ফেরেন। দিবসটি উপলক্ষে মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) আওয়ামী লীগ ও দলের অন্যান্য সহযোগী সংগঠনসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠন নানান কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করে বঙ্গবন্ধু সর্বস্তরের জনগণকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান। স্বাধীনতা ঘোষণার পর পাকিস্তানের সামরিক শাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খানের নির্দেশে তাকে গ্রেপ্তার করে তদানিন্তন পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে নিয়ে আটক রাখা হয়। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সৈন্যদের বিরুদ্ধে ৯ মাস যুদ্ধের পর চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হলেও ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে জাতি বিজয়ের পূর্ণ স্বাদ গ্রহণ করে।
জাতির পিতা পাকিস্তান থেকে ছাড়া পান ১৯৭২ সালের ৭ জানুয়ারি ভোররাতে অর্থাৎ ৮ জানুয়ারি। এদিন বঙ্গবন্ধুকে বিমানে তুলে দেওয়া হয়। সকাল সাড়ে ৬টায় তারা পৌঁছান লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দরে। পরে ব্রিটেনের বিমান বাহিনীর একটি বিমানে করে পরের দিন ৯ জানুয়ারি দেশের পথে যাত্রা করেন।
১০ জানুয়ারি সকালেই তিনি নামেন দিল্লিতে। সেখানে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভিভি গিরি, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, সমগ্র মন্ত্রিসভা, শীর্ষস্থানীয় নেতা, তিন বাহিনীর প্রধান এবং অন্যান্য অতিথি ও সে দেশের জনগণের কাছ থেকে উষ্ণ সংবর্ধনা লাভ করেন সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের পিতা শেখ মুজিবুর রহমান। এরপর এদিন দিল্লি থেকে দুপুর ১টা ৪১ মিনিটে ঢাকার মাটিতে পা রাখেন। আনন্দে আত্মহারা লাখ লাখ বাঙালি ঢাকা বিমানবন্দর থেকে রেসকোর্স ময়দান (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) পর্যন্ত তাকে স্বতঃস্ফূর্ত সংবর্ধনা জানান। বিকেল পাঁচটায় রেসকোর্স ময়দানে প্রায় ১০ লাখ লোকের উপস্থিতিতে তিনি ভাষণ দেন।
পরের দিন বিভিন্ন পত্রিকায় বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন নিয়ে লেখা হয়- স্বদেশের মাটি ছুঁয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসের নির্মাতা শিশুর মতো আবেগে আকুল হলেন। আনন্দ-বেদনার অশ্রুধারা নামলো তার দু’চোখ বেয়ে। প্রিয় নেতাকে ফিরে পেয়ে সেদিন সাড়ে সাত কোটি বাঙালি আনন্দাশ্রুতে সিক্ত হয়ে জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু ধ্বনিতে প্রকম্পিত করে তোলে বাংলার আকাশ-বাতাস।
জনগণ নন্দিত শেখ মুজিব সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দাঁড়িয়ে তার ঐতিহাসিক ধ্রুপদি বক্তৃতায় বলেন, যে মাটিকে আমি এত ভালোবাসি, যে মানুষকে আমি এত ভালোবাসি, যে জাতিকে আমি এত ভালোবাসি, আমি জানতাম না সে বাংলায় আমি যেতে পারব। আজ আমি বাংলায় ফিরে এসেছি বাংলার ভাইয়েদের কাছে, মায়েদের কাছে, বোনদের কাছে। বাংলা আমার স্বাধীন, বাংলাদেশ আজ স্বাধীন।
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন দেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে বাংলাদেশের মাটিতে প্রত্যাবর্তন করেন। এর আগে সরকার পরিচালনা করে অস্থায়ী প্রবাসী সরকার। ১২ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। ২৩ সদস্য বিশিষ্ট আওয়ামী লীগের মন্ত্রিসভা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করে।
১৯৭২ সালের ২৩ মার্চ জারিকৃত প্রেসিডেন্সিয়াল আদেশ বলে গণপরিষদ গঠন করে নভেম্বর মাসের মধ্যেই দেশের জন্য একটি সংবিধান উপহার দেয়া হয় এবং যা ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হয়।
দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশন বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করবে। জানা যায়, সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে থাকছে টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত ঘটনা নিয়ে অনুষ্ঠান ‘বঙ্গবন্ধুর টুঙ্গিপাড়া’। বিশেষ কবিতা আবৃত্তি ‘তোমারই পদধ্বনি’ প্রচারিত হবে সকাল ১২ টা ২০ মিনিটে। বিশেষ অনুষ্ঠান ‘ফিরে এলে তোমার স্বাধীন বাংলায়’ প্রচারিত হবে দুপুর ১টা ০৫ মিনিটে। দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে থাকছে কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘কবিতায় বঙ্গবন্ধু’। স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভা বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্র থেকে সরাসরি সম্প্রচারিত হবে বিকাল ৩ টা ০৫ মিনিটে।
৬টা ২০ মিনিটে রয়েছে কবিতা পাঠের অনুষ্ঠান ‘হৃদয়ের বাতিঘর’। ৮টা ৪০ মিনিটে থাকছে বিশেষ আলেখ্যানুষ্ঠান ‘কী দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর এ মহামিলন’। ১০টা ২০ মিনিট থাকছে বিশেষ আলোচনা অনুষ্ঠান। কবিতা পাঠের অনুষ্ঠান ‘ফিরে এলেন পিতা’ প্রচারিত হবে রাত ১১টা ০৫ মিনিটে। এছাড়াও অনুষ্ঠানের মাঝে-মাঝে প্রচার হবে বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত ফিলার গান ‘বঙ্গবন্ধু ফিরে এলে তোমার স্বপ্নের স্বাধীন বাংলায়’, জাতির পিতা মহান নেতা, বাংলার রক্তিম সূর্য ধন্য হলো, ফাঁসির মঞ্চ থেকে ফিরে এলে,‘বাঙালি জাতি ভুলবেনা কখনো’, ‘বিশ্বরাজনীতির ইতিহাসে দশ জানুয়ারি’,‘ তোমার জন্য কত পৃষ্ঠার লিখি বলো কাব্য’।
গানগুলোতে কণ্ঠ দিয়েছেন ছন্দা চক্রবর্তী, রুম্মান তিথি, মাহমুদুল হাসান, তারিক মৃধা, পুষ্পিতা, আতিক, অনন্যা আচার্য, স্বরলিপি, ইউসুফ, রাজীব, সুস্মিতা ও শেলু বড়ুয়া।এ উপলক্ষে গণমাধ্যমটির পরিচালক (অনুষ্ঠান ও পরিকল্পনা) জগদীশ এষ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস বাংলার ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় দিন। এ উপলক্ষে বিটিভির অনুষ্ঠান তালিকায় রয়েছে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য অনুষ্ঠান। বিটিভিও দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপন করছে।’