Saturday , July 27 2024
Breaking News

কয়েক ঘণ্টায় তৈরি হয়েছিল চাঁদ

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বার্তা ডেস্ক : জীবনানন্দের যে চাঁদ কোটি কোটি বছর ঘুরছে একই কক্ষপথে, সেই চাঁদ নাকি তৈরি হয়েছিল কয়েক ঘণ্টায়! এমনটাই বলছে সুপারকম্পিউটারের সিম্যুলেশন।

যুগ যুগ ধরে চাঁদ চাঁদের মতোই আছে এমনটা কবিতায় ভাবা গেলেও বিজ্ঞানীরা খুক খুক করে কাশছিলেন অনেক আগ থেকেই। এমনি এমনি তো আর কিছু হয় না, অন্তত ক্লাসিক্যাল পদার্থবিজ্ঞানের জগতে। তাই চাঁদটাকেও তৈরি হতে হয়েছিল। আর সেটা পৃথিবী আসার পরই। আর এমন একটা উপগ্রহ তৈরির পেছনে বড় একটা মহাজাগতিক ঘটনা থাকাই তো স্বাভাবিক।

এখন পর্যন্ত যে তত্ত্বখানা বেশি চাউর আছে, তা হলো পৃথিবী যখন গণগণে এক গোলক ছিল, তখন এর সঙ্গে প্রায় মঙ্গল গ্রহের সমান একটি গ্রহের সংঘর্ষ ঘটে। চন্দ্রদেবীর নামে ওটার নাম রাখা হয় থিয়া। সাড়ে চারশ কোটি বছর আগে থিয়াও ছিল আমাদের সৌরজগতের একটি গ্রহ। প্রেমের টানে (মানে মাধ্যাকর্ষণ) ওটা ছুটে এসেছিল পৃথিবীর দিকে। এরপর শুরু হয় প্রলয়কাণ্ড। থিয়ার সঙ্গে সংঘর্ষে বিপুল পরিমাণ বস্তু ছিটকে যায় কক্ষপথ ছাড়িয়ে বহুদূর। কালক্রমে সেগুলোই জমাট বেঁধে তৈরি হয় চাঁদ।

কিন্তু কতটা সময় লেগেছিল এই প্রক্রিয়ায়? ভাবতে গেলে মনে হবে এ তো নির্ঘাৎ কোটি বছরের কাজ। কিন্তু নাসার অ্যামেস রিসার্চ সেন্টার ও ইংল্যান্ডের ডারহাম ইউনিভার্সিটির গবেষকরা তাদের হাই রেজুলেশন সিম্যুলেশনে দেখলেন থিয়ার সঙ্গে সংঘর্ষের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই চাঁদ তার রূপ পেয়েছিল।
প্রথম ক্লু

চাঁদ সৃষ্টির প্রথম ক্লুটা বিজ্ঞানীরা পেয়েছিলেন ১৯৬৯ সালে। অ্যাপোলো-১১ মিশনের নিল আর্মস্ট্রং ও বাজ অলড্রিনরা চাঁদের ২১ কেজি ৬০০ গ্রাম মাটি নিয়ে এসেছিলেন। সেগুলো পরীক্ষা করে বিজ্ঞানীরা ঘোষণা দেন, চাঁদ তৈরি হয়েছিল ৪৫০ কোটি বছর আগে। পৃথিবী তৈরির ঠিক দেড়শ কোটি বছর পর। আবার চাঁদের মাটির গঠনের সঙ্গে পৃথিবীর পাথর ও ধুলার গাঠনিক মিল পাওয়ায় এ ধারণা আরও পোক্ত হয় যে চাঁদ একসময় পৃথিবীরই অংশ ছিল। আবার পৃথিবীর ঘূর্ণন ও চাঁদের কক্ষপথেও আছে এক ধরনের সামঞ্জস্য।

সিম্যুলেশন

থিয়া ও পৃথিবীর সংঘর্ষটা কেমন ছিল? এরপর চাঁদের আবির্ভাব কীভাবে ঘটল- এ ধরনের প্রশ্নের উত্তর পেতে দরকার হয় সিম্যুলেশনের। অর্থাৎ, উচ্চপ্রযুক্তির কম্পিউটারে যাবতীয় তথ্য দিয়ে ঘটনার ফল দেখা। এখানে তথ্য হিসেবে চাঁদের কক্ষপথ থেকে শুরু করে এর গঠন, উপাদান, বয়স, মাধ্যাকর্ষণ, পৃথিবীর কক্ষপথ সবই দেওয়া হয়েছে। এরপর থিয়া ও পৃথিবীকে বানানো হয়েছে পিক্সেল আকারে। আগের সিম্যুলেশনগুলোতে লাখখানেক ডিজিটাল কণা ব্যবহার করা হলেও এবার গবেষকরা ব্যবহার করেছেন ১০ কোটি ডিজিটাল পার্টিকেল। যত বেশি রেজুলেশন হবে, তত আমরা নিখুঁত গবেষণা করতে পারব। যেমন, বড় টেলিস্কোপে দূরের গ্রহের ছবি আরও স্পষ্ট দেখা যায়, ব্যাপারটা এমনই। বলেছেন, ডারহাম ইউনিভার্সিটির পোস্ট ডক্টরাল জ্যাকব কেগেরিস।

এ সিম্যুলেশন ঘটাতে তারা ব্যবহার করেছেন কসমা নামের একটি সুপারকম্পিউটার। কসমা দিয়ে করা হয়েছে কয়েকশ সিম্যুলেশন। নানা কোণ, নানা দিক ও থিয়ার ঘূর্ণনের গতিপথ বদলে পৃথিবীর সঙ্গে ঘটানো হয়েছে সংঘর্ষ। প্রতিবারই দেখা গেল সংঘর্ষের পরপর বাষ্প হয়ে ছিটকে যাওয়া পৃথিবীর নুড়ি-পাথরের একটা লেজ কয়েক লাখ কিলোমিটার পর্যন্ত ছড়িয়ে যায়। এরপর সেটা দুটি বড় খণ্ডে রূপ নেয়। এর মধ্যে বেশি বস্তুর খণ্ডটি আবার পৃথিবীর টানে ছুটে এসে আছড়ে পড়লেও দূরের খণ্ডটি ঘুরতে থাকে কক্ষপথে। ধীরে ধীরে ওটাই পরিণত হয় চাঁদে।

মিল অনেক

শুধু যে পৃথিবীর মাটির গঠনের সঙ্গে মিল আছে তা নয়, সিম্যুলেশনে তৈরি চাঁদের সঙ্গে আসল চাঁদের হেলে থাকা, (টিলটেড অরবিট) ভেতরের গলিত ধাতব কেন্দ্র এবং পৃষ্ঠতলের পাতলা স্তর; সবকিছুই পাওয়া গেছে ঠিকঠাক। এখন বিজ্ঞানীদের এই সিম্যুলেশনের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য নাসাকে তার ভবিষ্যতের আর্টেমিস মিশনের মাধ্যমে চাঁদের আরও নমুনা নিয়ে আসতে হবে। আর তাতে যদি এই তত্ত্ব টিকে যায় তবে মহাকাশের আরও অনেক অজানা অধ্যায় খুলে যাবে।

ডারহামের আরেক গবেষক ভিনসেন্ট এইকের মতে, চাঁদ সম্পর্কে আরও জানতে পারলে আমরা আমাদের বিবর্তন সম্পর্কেও জানতে পারব। তা ছাড়া গোটা মহাকাশে এমন সংঘর্ষ লেগেই আছে। এ ধরনের সংঘর্ষ ছাড়া গ্রহের গঠন ও বিবর্তন সম্ভব হয় না। সুতরাং, আরও বড় বড় সিম্যুলেশন ঘটাতে পারলে জানা যাবে, অন্য কোনো গ্রহ এখন বাসযোগ্য হওয়ার প্রক্রিয়ায় আছে কি না।

সিম্যুলেশনটি দেখতে পাবেন এই লিংকে: https://youtu.be/kRlhlCWplqk

এছাড়াও

ইন্সটাগ্রাম,ফেসবুক এবং অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বীর সাথে লিংক করা নিষিদ্ধ করলো টুইটার

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বার্তা ডেস্ক: টুইটার ব্যবহারকারীরা ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম এবং মাস্টোডন-এর মতো প্রতিদ্বন্দ্বী কিছু সামাজিক …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *